(?8ર রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা ও প্রজা সিভিলিয়ান রাউচি সাহেব আইনলঙ্ঘনপূর্বক উড়িষ্কার কোনো এক জমিদারকে : অপমান ও পীড়ন করাতে তৎকালীন লেফটেনাণ্ট গবর্নর ম্যাকডোনেল সাহেব অন্যায়কারীকে এক বৎসরের জন্য নিগৃহীত করিয়াছিলেন। ভাবিয়া দেখিলে ব্রিটিশ শাসনাধীনে এরূপ ঘটনা আশাতীত বিস্ময়জনক বলিয়া মনে হওয়া উচিত ছিল না—কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সাধারণের নিকট এই স্বায়বিচারটি আশাতীত বিস্ময়জনক বলিয়াই প্রতিভাত হইয়াছিল। এই কারণে মূঢ়মতি সাধারণ কিছু সবিশেষ আনন্দ প্রকাশ করিয়াছিল । অনতিকাল পরেই ম্যাকডোনেল সাহেব যখন যথাসময়ে এলিয়ট সাহেবকে র্তাহার গদি ছাড়িয়া দিলেন তখন এলিয়ট আসিয়া ম্যাকডোনেলের বিচার লঙ্ঘনপূর্বক রাউচিকে নিগ্ৰহ হইতে মুক্ত করিয়া উচ্চতর পদে প্রতিষ্ঠিত করিলেন। এখন আবার মূঢ়মতি সাধারণ সবিশেষ শোক প্রকাশ করিতে আরম্ভ করিয়াছে । কর্তার ইচ্ছা কর্ম। কর্তাই জানেন এমন প্রথাবিরুদ্ধ কাজ কেন করিলেন, আমরা কেবল অন্ধকারে অনুমান করিয়া মরিতেছি মাত্র। এমন হইতে পারে যে, সিভিলিয়ানের প্রেস্টিজ সিভিলিয়ান রক্ষা করিলেন । কিন্তু সেটা ঠিক হইল না। কারণ, এই ঘটনায় সাধারণের নিকট ম্যাকডোনেলের, এমন কি, গবর্মেন্টের প্রেস্টিজ, नष्ट झ्हेल्न । অনুমান করিতে গিয়া নানা লোক নানা কথা বলিতেছে—তাহার সব কথাই মিথ্যা হইতে পারে। মোটের উপর এইটুকু বলা যায় যে, গবর্মেন্টের পলিসি গবর্মেন্টই জানেন, আমরা সেই পলিসির দ্বারা পরিচালিত অন্ধ পুত্তলিকামাত্র। সেই কারণে আমার বক্তব্য এই যে, আমাদের কর্তৃস্থানীয় কোনো ব্যক্তির স্কায়াঙ্কায়বিচারে আমরা যে অকস্মাং অতিমাত্র হর্ষশোক প্রকাশ করিয়া থাকি সে আমাদের মোহবশত। যেখানে কর্তার ইচ্ছা কর্ম, যেখানে ব্যক্তিবিশেষের স্বভাব এবং মর্জির উপরে আমাদের শুভাশুভ অনেকট নির্ভর করিতেছে সেখানে ভালো এবং মন্দ, ন্যায় এবং অন্যায় উভয়ই আকস্মিক ক্ষণিক ঘটনামাত্র। ম্যাকডোনেল সাহেব স্বাহ করিলেন সেও তাহার নিজগুণে, এলিয়ট সাহেব যাহা করিলেন সেও তাহার নিজগুণে, আমরা নিতান্তই উপলক্ষ্য। তথাপি আঘাতে ব্যথিত এবং আদরে সুখী না হইয়া আমরা থাকিতে পারি না ।
