পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট A8ථ কিন্তু কিরূপ হইলে আমাদের যথার্থ মুখের এবং জাতীয় গৌরবের কারণ হয় তাহা । আমাদের সর্বদ স্মরণ রাখা কর্তব্য । সে আর কিছুই নহে,—ষখন আমাদের সাধারণের মধ্যে স্তায়াস্তায়বোধ এমন সুতীব্র । এবং সচেতন হুইয়া উঠিবে যে, অপমানে অন্যায়ে আমরা সকলে মিলিয়া যথার্থ বেদন বোধ করিতে থাকিব এবং সেই স্থায়ান্তায়বোধের খাতির রক্ষা করা গবর্মেন্টের একটা পলিসির মধ্যে দাড়াইয়া যাইবে তখন আমরা যথার্থ আনন্দ করিতে পারিব । 蟲 সাধারণত, ধর্মবুদ্ধি কর্মবুদ্ধি লোকনিন্দ সব-কটায় মিলিয়া আমাদিগকে কর্তব্যপথে চালনা করে। আমাদের গবর্মেন্টের কর্তব্যনীতি অনেকটা পরিমাণে কেবলমাত্র ধর্মবুদ্ধি ও কর্মবুদ্ধির উপরেই নির্ভর করিতেছে, প্রজাদিগের স্তায়ান্তায়বোধের সহিত . তাহার যোগ অতিশয় অল্প । ஆ সকলেই জানেন ধর্মবুদ্ধির সহিত কর্মবুদ্ধির বিরোধ বাধিলে অনেক সময় শেষোক্ত শক্তিটিরই জয় হইয়া থাকে, সেই স্বন্ধের সময় বাহিরের লোকের স্তায়ান্তায়বোধ ধর্মের সহায় হইয়া তাহাকে সবল করিয়া তোলে। যখন দেখিব প্রজার নিন্দ নামক শক্তি গবর্মেন্টের রাজকার্যের মধ্যে আপনার যথাযোগ্য স্থান অধিকার করিতে পারিয়াছে তখন আমরা আনন্দ প্রকাশ করিব। এই প্রজানিন্দ না থাকাতে ভারতবর্ষীয় ইংরেজের কর্তবাবুদ্ধি ক্রমে অলক্ষিতভাবে এত শিথিল ও বিকৃত হইয়া আসে যে, ইংলণ্ডবাসী ইংরেজের নৈতিক আদর্শ হইতে তাহাদের আদর্শের বিজাতীয় প্রভেদ হইতে থাকে। সেই কারণে দেখিতে পাই, ভারতবর্ষীয় ইংরেজ একদিকে আমাদিগকে ঘৃণা করে অপরদিকে স্বদেশীয় ইংরেজের মতামতের প্রতিও অত্যন্ত অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে, যেন উভয়েই তাহার অনাত্মীয় । ইহার অনেকগুলি কারণ থাকিতে পারে, তাহার মধ্যে একটি কারণ এই ষে, ইংলণ্ডে যে-সমাজনিন্দ ইংরেজকে সর্বদাই বিশেষ কর্তব্যপথ নির্দেশ করিয়া দিতেছে ভারতবর্ষে তাহ অত্যন্ত দূরবর্তী হওয়াতে ভারতবর্ষীয় ইংরেজ তাহার প্রভাব বিশ্বত হইয়া যায় । ইহার উপরে আবার আমাদের সহিত ইংরেজের অনেকটা স্বার্থের সম্পর্ক, এবং আমাদের প্রতি তাহাজের স্বজাতীয়ত্বের মমতাবন্ধন নাই, সুতরাং এখানে কর্তব্যবুদ্ধির বিশুদ্ধত রক্ষা করা ইংরেজের পক্ষে নানাকারণে কঠিন হইয় পড়ে। সেইজন্ত স্বার্থের সহিত, ক্ষমতাগর্বের সহিত পরাধীন দুর্বল জাতির নৈতিক আদর্শের সহিত, পরজাতি-শাসনতন্ত্রের বিবিধ কুটিলতার সহিত সংমিশ্রিত হইয়া ভারতবর্ষীয়