পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«88 রবীন্দ্র-রচনাবলী ইংরেজের একটা বিশেষ স্বতন্ত্র নূতন কর্তব্যনীতি গঠিত হইতে থাকে, তাহাকে অনেক সময় ইংলণ্ডের ইংরেজ ভালো করিয়া চেনে না । কোনো কোনো প্রতিভাসম্পন্ন ভারতবর্ষীয় ইংরেজ এই নূতন পদার্থটিকে ইংলণ্ডে ভালোরূপে পরিচিত করাইবার ভার লইয়াছেন। র্তাহারা প্রতিভাবলে দেখাইতেছেন, ' এই নূতন পদার্থের নূতনত্বের একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে। দৃষ্টান্তস্বরূপে রাডইয়ার্ড কিপলিঙের নাম উল্লেখ করা যাইতে পারে। তাহার অসামান্য ক্ষমতা । সেই ক্ষমতাবলে তিনি ইংরেজের কল্পনাচক্ষে প্রাচ্যদেশকে একটি বৃহং পশুশালার মতো দাড় করাইয়াছেন। তিনি ইংলণ্ডের ইংরেজকে বুঝাইতেছেন, ভারতবর্ষীয় গবর্মেন্ট একটি সার্কস কম্পানি । র্তাহারা নানাজাতীয় বিচিত্র অপরূপ জন্তুকে সভ্যজগৎসমক্ষে সুনিপুণভাবে নৃত্য করাইতেছেন। একবার সতর্ক অনিমেষ দৃষ্টি ফিরাইয়া লইলেই সব-কটা ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িবে। সুতীক্ষ কৌতুহলের সহিত এই জন্তুদিগের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করিতে হুইবে, যথাপরিমাণে চাবুকের ভয় এবং অস্থিখণ্ডের প্রলোভন রাখিতে হইবে এবং কিয়ংপরিমাণে পশুবাংসল্যেরও আবশ্যক আছে। কিন্তু ইহার মধ্যে নীতি প্রতি সভ্যতা আনিতে গেলে সার্কস রক্ষা করা দুষ্কর হইবে এবং অধিকারীমহাশয়ের পক্ষেও বিপদের সম্ভাবনা | কেবলমাত্র প্রাণশক্তির বলে প্রবল মকুন্যজন্তুদিগকে শাসনে সংযত রাখিয়া কেবলমাত্র অঙ্গুলির নির্দেশে তাহাদিগকে নিরীহ নৃত্যে প্রবৃত্ত করার ছবিটি ইংরেজের কাছে কৌতুকজনক মনোরম বলিয়া প্রতিভাত হইবার কথা । ইহাতে ইংরেজের মনে নূতনত্বের কৌতুহল এবং স্বজাতিগর্বের সঞ্চার করে এবং আসন্ন বিপদকে শাসনে রাখিবার যে-একটি স্বতীব্র আনন্দ আছে তাহাও ইংরেজপ্রকৃতির নিকট পরম উপাদেয়রপে প্রতীয়মান হয় । এদিকে ইংলণ্ডে অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানের দলও দিনে দিনে বাড়িয়া উঠিতেছে । অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ানের সাহিত্যও বিস্তারলাভ করিতেছে। ইংলণ্ডের ভূমিতে অ্যাংলোইণ্ডিয়ানের মত ক্রমশ বদ্ধমূল হইয়া শাখাপল্পবিত হইতেছে। এই স্থলে স্তায়াছুরোধে এ-কথাও বলিয়া রাখা উচিত, অনেক অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান ভারতকাৰ হইতে অবসর লইয়া স্বদেশে ফিরিয়া নিঃসহায় ভারতবাসীদের প্রতি পরম হিতৈষিতাচরণ করিতেছেন। এই সকল কারণে স্বদেশস্থ ইংরেজের মধ্যেও একদল সন্দেহ করিতেছেন যে, তাহার নিজেদের সম্বন্ধে যে-সকল কর্তব্য পালন করিয়া চলেন তাহার অধিকাংশই প্রাচ্যদেশীয়