পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O পরিশিষ্ট (շ8Գ কোনো কর্তৃপুরুষের লাঞ্ছনা হইতে পারে ইহা মনে করাই তোমাদের পক্ষে স্পর্ধা, সেই স্পর্ধায় পদাঘাত করিবার জন্য যদি বা প্রথা উল্পভবন যদি বা রাজশাসনের অনাদর করিতে হয় তবে তাহাও শ্রেয়। ইংরেজ স্তায়পরতার অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, ধর্মবিচারেরও অতীত । সত্যের অনুরোধে স্বীকার করিতে হইবে যে, সম্প্রতি দুই-একটি ঘটনায় দেখা গিয়াছে, গবর্মেন্ট কেবল ইংরেজ নহে নিজের কর্মচারীমাত্রকেই ন্যায়বিচারের কিঞ্চিং উর্ধ্বে তুলিয়া রাপিতে চাহেন। বালাধন হত্যাকাণ্ডের মকদ্দমায় ইংরেজ জজ হইতে বাঙালি পুলিস কর্মচারী পর্যন্ত যে কেহ লিপ্ত ছিল, হাইকোর্টের বিচারে যাহারা প্রত্যেকে প্রকাতে নিন্দিত হইয়াছে তাহারা সকলেই বাংলা গবর্মেন্ট কর্তৃক পুরস্কৃত এবং উংসাহিত হইয়াছে । আমরা বাহিরের লোক, রাজনীতির ভিতরকার কথা কিছুই জানি না । হয়তে ইহার মধ্যে কোনো গোপন কারণ থাকিতে পারে। হয়তো কর্তার এমন ধারণা হইতে পারে যে, বালাধনের মকদ্দমায় স্থানীয় জজের বিচার অন্যায় হয় নাই ; যেমন করিয়া হউক গোটা পাচ-সাত লোকের ফাসি যাওয়া উচিত ছিল । তাহাদের এমন সংস্কার হইতে পারে যে, আদালতে টিকিবার যোগ্য প্রমাণ না থাকিলেও ঘটনাটা প্রকৃতপক্ষে সত্য এবং সে-সত্য স্থানীয় বিচারকই কেবল নির্ণয় করিতে পারে, হাইকোর্টের জজের পক্ষে অসাধ্য | আমাদের বক্তব্য এই যে, দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে প্রকাস্তে যাহাদের ব্যবহার নিন্দিত হইয়াছে, সাধারণের নিকটে যাহারা অন্যায়কারী বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে, শাস্তি দেওয়া দূরে থাক তাহাদিগকে প্রকাস্তে পুরস্কৃত করিলে জনসাধারণের স্তায়ান্তায়জ্ঞানের প্রতি একাস্ত অবজ্ঞা প্রকাশ করা হয় । সকলকে বলা হয়, তোমাদের কাছে কর্তব্য-অকর্তব্য সম্বন্ধে কোনোরূপ কৈফিয়ত দিবার কোনো আবগুক দেখি না—তোমরা ভালোই বল মন্দই বল তাহাতে গবর্মেন্টের কোনো মাথাব্যথা নাই। আমাদের ভারি স্টং গবর্মেন্ট । যে গবর্নর প্রজার মর্মবেদনার উপর প্রজার ন্যায়ান্তায়বোধের উপর জুতার গোড়ালি ফেলিয়া ফেলিয়া চলেন এবং সেই মচমচ শব্দে দুর্বল কণ্ঠের অর্তিস্বর নিমগ্ন করিয়া দেন তিনি অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ায় স্টং গবর্নর। কিন্তু তাহাতে র্তাহাদের বলপ্রকাশ পায়, না, আমাদের যৎপরোনাস্তি দুর্বলতার স্বচনা করে তাহা কাহাকেও বলিয়া দেওয়া আবশুক করে না । গবর্মেন্টের এরূপ উদ্ধত অবজ্ঞায় ইহাই প্রকাশ পায় যে, তাহাদের মতে ভারতবর্ষীয় জনসাধারণের ন্যায়ান্যায়বোধ