পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৭২ 粤 রবীন্দ্র-রচনাবলী & বরিশাল হইতে দেশবন্ধু শ্ৰীযুক্ত অশ্বিনীকুমার দত্ত মহাশয় কনগ্রেস সম্বন্ধে একটি আলোচনাপত্র আমাদের নিকট পাঠাইয়াছেন। আমাদের যাহা বক্তব্য তাহা সংক্ষেপে বলিতে চেষ্টা করিব । আমরা জানি ইংলণ্ডে রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্য অনেক সভা আছে। এবং সময়ে সময়ে “কর্ন ল” প্রভৃতি বিশেষ বিধি লইয়া ইংলণ্ডের অনেক উদ্যমশীল মহাত্মা অশ্রাস্ত অধ্যবসায়ের সহিত স্বদেশকে স্বমতে দীক্ষিত করিয়াছেন। তাহাদের উৎসাহ ও অধ্যবসায় বারংবার বাধা সত্ত্বেও নিরস্ত হয় না, এবং আমাদেরই বা অল্প বিয়ে কেন হয় ? অবশু, উদ্যমশীলতায় তাহারা আমাদের অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ, সে একটা কারণ ; কিন্তু যথার্থ কারণ, তাহারা আশালতার বীজ নিজের জমিতে বপন করিতেছেন, আকাশকুসুমপ্রত্যাশী হতভাগ্য আমাদের মতো বাতাসে উড়াইয়া দিতেছেন না । গবর্মেন্টের সহিত র্তাহাদের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ। র্তাহাদের হৃৎপিণ্ড হইতেই রক্ত সঞ্চালিত হইয়। গবর্মেন্টের হাত পাকে কার্যক্ষম করিয়া তুলে। র্তাহাদের পক্ষে দেশকে বিশেষ মতে দীক্ষিত করা এবং সেই মতের দ্বারা গবর্মেন্টকে চালিত করা একই কথা । কিন্তু আমাদের কনগ্রেস গবর্মেন্টের দ্বারের বাহিরে । তাহার কেবল ভিক্ষার অধিকার আছে। সেই ভিক্ষার মধ্যে এমন আশার মহত্ব বা কর্মের গৌরব কিছুই নাই যাহাতে দেশকে দীর্ঘকাল উৎসাহিত করিয়া রাথিতে পারে । আমরা নিশ্চয় জানি অনুগ্রহশ্বরূপ আজ যাহা লাভ করিব, কাল তাহা হারাইবার কোনো বাধা নাই। দয়া করিয়া আজ যদি আমাদিগকে কেহ স্বায়ত্তশাসন দিলেন ভাবিলাম এক পরমার্থ লাভ হইল, আবার কর্তাদের মধ্যে কাল যদি সেটাকে কেছ পঙ্গু করিয়া দেন তবে আমরা কেবল বক্ষে করাঘাত করিয়া হাহাকার করিয়া মরিব । আমাদের অদৃষ্টে ভারতের রাজশক্তি অনেকটা পদ্মানদীর মতো। আজ পাচ বৎসরে আমাদের কপালে যেখানে পলি পড়িল পরের পাচ বৎসরে সেখানে বালি পড়িতে এবং তাহার পরের পাঁচ বৎসরে ভাঙন ধরিতে কোনো বাধা নাই। এই চরের উপর যদি আমরা কনগ্রেসের ভিত্তি স্থাপন করিয়া তাহার স্থায়িত্ব প্রত্যাশা করি তবে আমরা মূঢ় । কনগ্রেস যদি নিজ শক্তিতে দেশের স্থায়ী উন্নতি সাধন করিতে পারে, তবেই সে দেশের হৃদয়ের মধ্যে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা লাভ করিবে, কিন্তু যদি বিচিত্র মেজাজের প্রভুপরম্পরার