পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢ዓ\» রবীন্দ্র-রচনাবলী মুখুজ্যে বনাম বাড়ুজ্যে রাজা প্যারমোহন মুখোপাধ্যায় মহাশয় সম্প্রতি এক সম্প্রদায় জমিদারের মুখপাত্র হইয়া কনগ্রেসপক্ষীয়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশপূর্বক আক্ষেপ করিয়াছেন যে, দেশের যাহারা “ন্যাচারাল লীডার” বা স্বাভাবিক অধিনেতা বা প্রকৃত মোড়ল, নানা অস্বাভাবিক কারণে ক্ষমতা তাহাদের হস্ত হইতে বিচু্যত হইয়া পড়িতেছে। রাজত্ব কাহার হইবে ইহা লইয়া অনেক দেশে অনেক লড়াই হইয়া গিয়াছে। কুরুপাণ্ডবের মধ্যেও একটা খুব বড়ো রকম তর্ক হইয়াছিল যে, রাজ্যে কাহার স্বাভাবিক অধিকার । উভয় পক্ষ হইতে যে-সকল সূক্ষ্ম এবং স্থল, তীক্ষ্ণ এবং গুরুতর মারাত্মক যুক্তি প্রয়োগ হইয়াছিল মহাভারতে তাহার বিস্তারিত বর্ণনা আছে। দাদা ধৃতরাষ্ট্র বড়ো বটে কিন্তু তিনি অন্ধ, সেইজন্য কনিষ্ঠবংশে রাজ্যের ভার পড়িয়াছিল । আমাদের জমিদার-কৌরবপক্ষীয়ের যদি স্বাভাবিক অন্ধত না থাকিত তবে কনিষ্ঠ কনগ্রেস-পাণ্ডবগণের নেতৃত্ব-সিংহাসনে দাবি থাকিত না । যাহা হউক, গৃহবিবাদে মঙ্গল নাই । কতকটা সুখের বিষয় এই যে, এ-বিবাদ একটা মৌখিক অভিনয়মাত্র। মুখুজ্যেমহাশয় মনে মনে বেশ জানেন যে, বাড়ুজ্যেমহাশয় কম লোক নহেন কিন্তু সরকারের কাছে সে-কথা বলিয়া সুবিধা নাই । তাহাদের বলিতে হয়, হুজুরেরা যে কনগ্রেসকে দুচক্ষে দেখিতে পারেন না আমাদেরও ঠিক সেই দশা । ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ, গান্ধারী সেই আক্ষেপে নিজের চোখে কাপড় বাধিতেন, কারণ তিনি সাধবী ছিলেন। গবমেণ্ট যদি কাহারও প্রতি অন্ধ হন, তবে মুখুজ্যে মহাশয়ের কর্তব্য চোখে কাপড় বাধা, কারণ র্তাহারা খয়ের খা । কেবল রাজভক্তি নহে, ইহার মধ্যে একটু পাকা চালও অাছে। উপরওআল। রাজপুরুষেরা আজকাল যখন স্পষ্টত নূতন জনসভাসকলের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করিয়াছেন তখন এ-কথা বলিবার সুযোগ হইয়াছে যে, সরকার যদি মুখুজ্যেমহাশয়দিগকে যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াইয়া দেন তাহা হইলে বাড়ুজোমহাশয়রা আর এত বাড়াবাড়ি করিতে পারেন না। আমরা স্বভাবতই বড়োলোক, তোমরাও আমাদিগকে বড়ো করিয়া রাখে, কনগ্রেস আপনি ছোটো হইয়া যাইবে । আমরা স্ফীত আছি বটে কিন্তু আরও স্ফীত হইতে পারি তোমরা আর-একটু ফু দাও যদি । তাহা হইলে ওই চাকরিবঞ্চিত নৈরাগুপীড়িত কৃশ কনগ্রেসটাকে আরও অনেকটা ক্ষীণ দেখিতে হয়।