রবীন্দ্র-রচনাবলী * ون م2b) দূরে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইয়া যায় তবে জননায়কের পদ গ্রহণ করিতে, বাওর নিতান্তই অসংগত। _ কিন্তু, ভিন্নভাষী ভারতকে এক করিবার জন্ত কনগ্রেসের ভাষা ইংরেজি হওয়া উচিত এমন তর্ক র্যাহার এ-স্থলে উত্থাপন করিবেন তাহারা আমার কথা সম্পূর্ণ বুঝিতে পারেন নাই। যেখানে ইংরেজি বলা দরকার সেখানে অবশু ইংরেজি বলিবে,–কিন্তু তোমার ভাষাটা কী ? তোমার লেখাপড়া ধ্যানধারণা মন্ত্রতন্ত্র সমস্তই ইংরেজিতে কি না ? জনসভার বাহিরে দেশের সহিত তুমি কিরূপ সংস্রব রাখিয়া চল ? ইংরেজি ভাষায় যেটুকু কর্তব্য তাহা যেন সাধন করিলে কিন্তু দেশী ভাষায় ষে-কর্তব্যপুঞ্জ পড়িয়া আছে, যাহা কাগজে রিপোর্টের জন্ত নহে, যাহা সমুদ্রপারে উদ্বেলিত হইবার জন্ম নহে, যাহার ফলাফল যাহার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি শুদ্ধমাত্র আমাদের দেশী মণ্ডলীর মধ্যে বদ্ধ তাহাতে হাত দিতে তোমার মন উঠে ? গবর্মেন্টের সম্মান র্যাহাদের কর্তব্যবুদ্ধির আশ্রয়দণ্ড তাহাদিগকে তোমরা নিন্দ কর, কিন্তু ইংরেজ-করতালির এলাকার বাহিরে যাহাদের কর্তব্যবুদ্ধি পদনিক্ষেপ করে না তাহারাই কি প্রচুর সম্মানের অধিকারী ! কনগ্রেস যেমন সমস্ত ভারতবর্ষের মিলনসভা, কনফারেন্স তেমনি সমস্ত বাংলার । সেই সমগ্র বাংলার মিলনক্ষেত্রে বাঙালির কী অভাব বাঙালির কী কর্তব্য সেও যদি আমরা ইংরেজি ভাষায় বলিবার প্রলোভন সংবরণ করিতে না পারি তবে তাহা হইতে কী প্রমাণ হয় ? এই প্রমাণ হয় যে, দেশকে র্যাহারা চালনা করিতে চাহেন তাহারা, হয় দেশী ভাষা জানেন না, নয় কর্তব্যের ক্ষতি করিয়াও ইংরেজি ভাষা ব্যবহার না করিলে র্তাহীদের অভিমান চরিতার্থ হয় না । অতএব ভালো করিয়া দেখিলে দেখা যায় জমিদারের চরিত্রে যে-যুণ ঢুকিয়াছে আমাদের জননায়কদের চরিত্রেও সেই ঘুণ। ইংরেজের কৈশিকাকর্ষণ আমাদের দুই পক্ষেরই মস্তকের উপরে। ইংরেজকে বাদ দিলে আমাদের কর্তব্যে স্বাদ থাকে না, সম্মানে গৌরব থাকে না, বেশভূষায় মর্যাদা থাকে না ; আমাদের দেশের লোকের খ্যাতি অপেক্ষ গবর্মেন্টের খেতাব, আমাদের দেশের লোকের আশীৰ্বাদ অপেক্ষ বিলাতি কাগজের রিপোর্ট আমাদের কাছে শ্রেয়। ইংরেজের সহিত সমান অধিকার ভিক্ষা করিয়া লইবার জন্ত ইংরেজি ভাষা আবস্তক হইতে পারে কিন্তু স্বদেশকে উচ্চতর অধিকারের উপযোগী করিয়া তুলিবার জন্ত দেশীয় ভাষা, দেশীয় সাহিত্য, দেশীয় সমাজের মধ্যে থাকিয়া সমাজের উন্নতিসাধন একমাত্র উপায়। র্যাহার স্বদেশ অপেক্ষ আপনাকে অনেক উর্ধ্বে অধিষ্ঠিত বলিয়া জানেন,
