পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨8 রবীন্দ্র-রচনাবলী (* জাগিয়া উঠে। আমাদের অবস্থা যে কিরূপ নিঃসহ উপায়বিহীন, কিরূপ সম্পূর্ণ পরের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিয়া আছে, আমাদের নিজের শক্তি যে এতটুকুও অবশিষ্ট নাই ষে রাষ্ট্রনীতির রধটা আমাদের প্রবল অনিচ্ছাকেও একটি ক্ষুদ্র বাধা জ্ঞান করিয়াও অল্পমাত্র বাকিয়া চলিবে ইহা যখন বুঝি তখন নিরুপায়ের মনেও উপায় চিন্তার জন্য একটা ক্ষোভ জন্মে । কিন্তু আমাদের প্রতি রাষ্ট্রনীতির এতদূর উপেক্ষার কারণ কী ? ইহার কারণ, আমাদের দ্বারা কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নাই। কেন নাই ? আমরা বিচ্ছিন্ন, বিভক্ত। আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ঢেউ কাহাকেও জোরে আঘাত করিতে পারে না । সুতরাং কোনো কারণে ইহার সঙ্গে আপস করিবার কোনোই প্রয়োজন হয় না। এমন অবস্থায় আমাদের কোনো ইচ্ছা বা অনিচ্ছা আমরা যদি মনের আবেগে কিছু উচ্চকণ্ঠে প্রকাশ করি, তবে উচ্চ-আসনের লোকের সেই অশক্ত আস্ফালনকে কখনোই বরদাস্ত করিতে পারেন না। ইচ্ছার পশ্চাতে যেখানে শক্তি নাই সেখানে তাহা স্পর্ধা । এমন অবস্থায় ক্ষতি করিবার শক্তি আমাদের কোথায় আছে তাহা একাগ্রমনে খুজিয়া দেখিবার ইচ্ছা হয়। ইহা স্বাভাবিক। এই ইচ্ছার তাড়নাতেই "স্বদেশী” উদযোগ হঠাৎ অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের দেশে এমন প্রবল হইয়া উঠিয়াছে। আমরা তোমাদের জিনিস কিনি বলিয়া তোমাদের কাছে ভারতবর্ষের এত দাম অতএব ওইখানে আমাদের একটা শক্তি আছে । আমাদের অস্ত্রশস্ত্র নাই কিন্তু যদি আমরা এক হইয়া বলিতে পারি যে, বরং কষ্ট সহিব তবু তোমাদের জিনিস আমরা কিনিব না, তবে সেখানে তোমাদিগকে হার মানিতে হইবে । ইহার অনেক পূর্ব হইতেই স্বদেশী সামগ্রী দেশে চালাইবার চেষ্টা ভিতরে ভিতরে নানাস্থানে নানা আকারে দেখা দিতেছিল—সুতরাং ক্ষেত্র কতকটা প্রস্থত ছিল। তাহা না থাকিলে শুদ্ধ কেবল একটা সাময়িক রাগারগির মাথায় এই উদযোগ এমন অভাবনীয় বল পাইয়া উঠিত না । কিন্তু সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উভয়প্রকার যুদ্ধেই নিজের শক্তি ও দলবল বিচার করিয়া চলিতে হয়। আস্ফালন করাকেই যুদ্ধ করা বলে না। তা ছাড়া একমুহূর্তেই যুদ্ধং দেহি বলিয়া যে-পক্ষ রণক্ষেত্রে গিয়া দাড়ায় পরমুহূর্তেই তাহাকে ভঙ্গ দিয়া পালাইবার রাস্ত দেখিতে হয়। আমরা যখন দেশের পোলিটিকাল বস্তৃতাসভায় তাল ঠুকিয়া দাড়াইলাম, বলিলাম, এবার আমাদের লড়াই শুরু হইল, তখন আমরা নিজের অন্ত্রশস্ত্রদলবলের কোনো হিসাবই লই নাই। তাহার প্রধান কারণ আমরা দেশকে যে ভালোবাসি না কেন, দেশকে ঠিকমতে কেহ কোনোদিন জানি না। g