পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট \9ఇవి স্বাহাদিগকে জাতিরক্ষা করিতে হইবে, পরের হাতে চিরদিন অপমানিত না হইয়া তাহাদের গতি নাই। তাহারা যাহাদিগকে ম্লেচ্ছ বলিয়া অবজ্ঞা করিতেছে সেই মেচ্ছের অবজ্ঞ তাহাদিগকে সহ করিতে হইবেই। মাকুযকে মানুষ বলিয়া গণ্য করা যাহাদের অভ্যাস নহে, পরম্পরের অধিকার যাহারা স্বাক্ষাতিস্বল্পভাবে সীমাবদ্ধ করিয়া রাখিবার কাজেই ব্যাপৃত ; যাহারা সামান্ত স্খলনেই আপনার লোককে ত্যাগ করিতেই জানে, পরকে গ্রহণ করিতে জানে না ; সাধারণ মানুষের প্রতি সামান্ত শিষ্টতার নমস্কারেও যাহাদের বাধা আছে ; মানুষের সংসর্গ নানা আকারে বাচাইয়া চলিতে যাহাদিগকে সর্বদাই সতর্ক হইয়া থাকিতে হয় মচুন্যত্ব হিসাবে তাহাদিগকে দুর্বল হইতেই হইৰে । যাহারা নিজেকেই নিজে খণ্ডিত করিয়া রাখিয়াছে, ঐক্যনীতি অপেক্ষ ভেদবুদ্ধি যাহাদের বেশি, দৈন্ত অপমান ও অধীনতার হাত হইতে তাহারা কোনোদিন নিষ্কৃতি পাইবে না । যাহা হউক “বয়কট”-যুদ্ধ ঘোষণা করিয়া আমরা বাহির হইলাম এবং দেশধর্মগুরুর নিকট হইতে স্বরাজমন্ত্রও গ্রহণ করিলাম ; মনে করিলাম এই সংগ্রাম ও সাধনার যত কিছু বাধা সমস্তই বাহিরে, আমাদের নিজেদের মধ্যে আশঙ্কার কারণ কিছুই নাই। এমন সময় হঠাং আমাদের ভিতরকার বিচ্ছিন্ন অবস্থা বিধাতা এমন মুকঠোর সুস্পষ্ট আকারে দেখাইয়া দিলেন যে, আমাদের চমক লাগিয়া গেল। আমরা নিজেরাই নিজেদের দলনের উপায়, অগ্রসর হইবার প্রতিবন্ধক, এ-কথা যখন নিঃসংশয়রূপে ধরা পড়িল তখন এই কথাই আমাদিগকে বলিতে হুইবে যে, স্বদেশকে উদ্ধার করিতে হইবে ; কিন্তু কাহার হাত হইতে ? নিজেদের পাপ হইতে । ইংরেজ সমস্ত ভারতবর্ষের কাধের উপরে এমন করিয়া ষে চাপিয়া বসিয়াছে সে কি. কেবল নিজের জোরে ? আমাদের পাপই ইংরেজের প্রধান বল। ইংরেজ আমাদের ব্যাধির একটা লক্ষণ মাত্র ; লক্ষণের দ্বারা ব্যাধির পরিচয় পাইয়া ঠিকমতে প্রতিকার করিতে না পারিলে গায়ের জোরে অথবা বন্দেমাতরম্ মন্ত্র পড়িয়া সন্নিপাতের হাত এড়াইবার কোনো সহজ পথ নাই । বিদেশী রাজা চলিয়া গেলেই দেশ ষে আমাদের স্বদেশ হইয়া উঠিবে তাহা নহে। দেশকে আপন চেষ্টায় আপন দেশ করিয়া গড়িয়া তুলিতে হয়। অন্নবস্ত্ৰ-মুখস্বাস্থ্যশিক্ষাদীক্ষাদানে দেশের লোকই দেশের লোকের সর্বপ্রধান সহায়, দুঃখে বিপদে দেশের লোকই দেশের জন্ত প্রাণপণ করিয়া থাকে ইহা যেখানকার জনসাধারণে প্রত্যক্ষভাবে জানে সেখানে স্বদেশ ষে কী তাহা বুঝাইবার জন্ত এত বকবিকি করিতে হয় না। আজ আমাদের ইংরেজিপড়া শহরের লোক যখন নিৰক্ষর গ্রামের লোকের কাছে গিয়া