পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VHම්හි রবীন্দ্র-রচনাবলী ভাবিয়া দেখো দেশ আমাদের হইতে কত দূরে, কত সুদূরে। আমাদের “ম্বর হইতে আঙিনা বিদেশ।” সমস্ত ভারতবর্ষের কথা ভাবিলে তো মাথা ঘুরিয়া যায়—শুদ্ধমাত্র বাংলাদেশের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক কত ক্ষীণ । এই বাংলাদেশও জ্ঞানে প্রেমে কর্মে আমাদের প্রত্যেকের হইতে কতই দূরে। ইহার জন্ত আমরা কতটুকুই বা দিতেছি, কতটুকুই বা করিতেছি এবং ইহাকে জানিবার জন্যই বা আমাদের চেষ্টা কত সামান্ত । নিজের মন এবং ব্যবহার সত্যরূপে আলোচনা করিয়া সত্য করিয়া বলে দেশের প্রতি আমাদের ঔদাসীন্য কী সুগভীর। ইহার কোন দুঃখে কোন অভাবে কোন সৌন্দর্ধে কোন সম্পদে আমাদের চিত্তকে এমন করিয়া আকর্ষণ করিয়াছে যে নানাদিক হইতে আমাদের নানা লোক তাহার প্রতি আপন সময় ও সামর্থোর বহুল অংশ ব্যয় করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে। আমরা শিক্ষিত কয়েকজন এবং আমাদের দেশের বহুকোটি লোকের মাঝখানে একটা মহাসমূদ্রের ব্যবধান । ত্রেতাযুগের সেতুবন্ধনে কাঠবিড়ালি যতটুকু কাজ করিয়াছিল আমাদের মাঝখানের এই সমুদ্রে সেতু বাধিতে আমরা ততটুকুও করি নাই। সকল বিষয়ে সকল কাজই বাকি পড়িয়া আছে । অথচ এমন সময়ে আমাদের মনে দুর্দাস্ত অভিমান জাগিয়া উঠিয়াছে । ইংরেজকে ডাকিয়া বুক ফুলাইয়া বলিতে ইচ্ছা করিতেছে, আমরা সম্পূণ সক্ষম, সমর্থ, প্রস্থত । আমরা কোনোমতেই তোমাদের অবজ্ঞার পাত্ৰ মই । তোমরা যদি আমাদিগকে অবজ্ঞা কর আমরাও তোমাদিগকে অবজ্ঞা করিতে পারি । এই কটা কথা খুব জোরে বলিবার সুধই যদি আমাদের দেশের পক্ষে যথেষ্ট হয় তবে এই পালাই চলুক। কিন্তু এখনই আমরা সমস্তই পারি এই ভুলটা প্রচার করিয়া ও বিশ্বাস করিয়া ভবিষ্যতে আমরা যাহা পারিব তাহার গোড়ী যদি মারিয়া দিই তবে আমাদের অন্তকার সমস্ত আস্ফালন একদিন তিতুমীরের লড়াইয়ের সঙ্গে এক ইতিহাসে ভূক্ত হইবে। বড়াই করিয়া নিজের ও অন্তের কাছে দুর্বলতা ঢাকিতে গিয়া সেই দুর্বলতাকে প্রতিপদে সপ্রমাণ করিতে থাকিলে এমন একদিন আসিবে যেদিন আমরা নিজেকে অন্যায়রুপে অবিশ্বাস করিব—নিজের মধ্যে যে-সম্ভাব্যতা আছে তাঙ্গাকে অস্বীকার করিব—স্বজাতিকে গালি পাড়িয়া নিষ্কৰ্মতাকে আড়ম্বরপূর্বক আশ্রয় করিব—অকালে উৎপীড়ন সহ করিয়া আরামের মধ্যে হাল ছাড়িয়া দিতে চেষ্টা করিব। অতএব