পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৩৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী না হয় বারুদকেই কর্তৃপক্ষের আসামির দলে দাড় করাইয়া থাকেন—জগতের সর্বত্রই তাহার প্রমাণ দেখা যায়। মণিপুরী হত্যাকাণ্ড যাহারা ঘটাইয়াছিলেন, মণিপুরীদের দও দিয়া তাহার ধর্মবুদ্ধিকে তৃপ্ত করিয়াছেন এবং আজ বাংলাদেশে ষে বিচিত্র রকমের উংপাত বাধিয়া উঠিয়াছে সেজন্য বাঙালিকেই বন্ধনপীড়ন সহ করিতে হইতেছে ওদিকে কার্জন ও মলির জয়ধ্বনির বিরাম নাই। বস্তুত বারুদকে ও দেশলাইকে যাহারা সত্য বলিয়া জানে ও স্বীকার করে তাহারা এই দুটোর সংস্রবকে ঠেকাইবার জন্য সর্বপ্রকার উপায় উদভাবন করিয়া থাকে। দোষ যাহারই হউক বা রাগ যাহার পরেই থাকু সে-কথা লইয়া গরম না হইয়া হাতের কাজটা কী করিলে সিদ্ধ হয় এই ব্যবস্থা করিবার জন্যই তাহারা তৎপর হয়। এবারকার কনগ্রেসের র্যাহারা অধ্যক্ষ ছিলেন তাহারা অপ্রিয় বা বিরুদ্ধ সত্যকে স্বীকার করিবেন না বলিয়া ঘর হইতে পণ করিয়া আসিয়াছিলেন । স্বীকার করিলেই পাছে তাহাকে খাতির করা হয় এই তাহাদের আশঙ্কা । চরমপন্থী বলিয়া একটা দল যে-কারণেই হউক দেশে জাগিয়া উঠিয়াছে এ-কথা লইয়া আক্ষেপ করিতে পার কিন্তু ইহাকে অস্বীকার করিতে পার না । এই দলের ওজন কতটা তাহা বুঝিয়া তোমাকে চলিতেই হইবে । কিন্তু যখন স্বয়ং সভাপতিমহাশয়ের মস্তব্যেও এই দলের প্রতি কটাক্ষপাত করা হইয়াছিল তখন স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে তিনি নিজের বিরক্তিপ্রকাশকেই কর্তব্যসিদ্ধি বলিয়া মনে করিয়াছেন—- অবস্থা বিচার করিয়া মার বাচাইয়া কনগ্রেসের জাহাজকে কুলে পৌছাইয়া দেওয়া সম্বন্ধে তাহার চিন্তা ছিল না । ইহা যে ওকালতি নহে, বিরুদ্ধ পক্ষকে বক্তৃতার গদাঘাতে পাড়িয়া ফেলাই যে এই বৃহং কাজের পরিণাম নহে, দেশের সকল মতের লোককে একত্রে টানিয়া সকলেরই শক্তিকে দেশের মঙ্গলসাধনে নিয়োগ করিতে উৎসাহিত করাই যে ইহার সকলের চেয়ে বড়ো উল্পেগু তাহ সাময়িক উত্তেজনায় তিনি মনে রাখেন নাই । তিনি এমন ভাবে কনগ্রেসের হালের কাছে দাড়াইয়াছিলেন যেন ওই চরমপন্থীর দলট জলের একটা ঢেউমাত্র, উহা পাহাড় নহে, যেন কেবল প্রবল বাক্যবায়ুতে পাল উড়াইয়াই উহাকে ডিঙাইয়া যাওয়া চলিবে । আবার চরমপন্থীরাও এমনভাবে কোমর বাধিয়া কনগ্রেসের রণক্ষেত্রের মধ্যে প্রবেশ করিলেন যেন, যে-মধ্যমপন্থীরা এতদিন ধরিয়া কনগ্রেসকে চালনা করিয়া আসিয়াছেন, র্তাহার এমন একটা বাধা যাহাকে ঠেলিয়া অভিভূত করিয়া চলিয়া যাইবেন, ইহাতে যাহা হয় তা হ’ক । এবং এটা এখনই করিতে হইবে—এইবারেই জয়ধ্বজা উড়াইয়া না গেলেই নয়। দেশের মধ্যে এবং কনগ্রেসের সভায় মধ্যমপন্থীর স্থানটা যে কী তাছা