পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

®®® রবীন্দ্র-রচনাবলী নায়কপদে অভিষিক্ত করিবার প্রস্তাব আমি উত্থাপন করিতেছি । নিয়োগপঞ্জ দিলে তাহার ক্ষমতা সুনিশ্চিত এবং তাহার দায়িত্ব গভীরতর হইবে এবং তিনি কেবলমাত্র শিক্ষিতসম্প্রদায়ের ইংরেজিবিদ্যার অভ্যস্ত বুলির প্রতি কৰ্ণপাত না করিয়া আমাদের এই পুরাতন দেশের চিরন্তন প্রকৃতির প্রতি মনোযোগ করিবেন —ষে-সকল পদার্থ পরদেশের সজীব কলেবরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যথাস্থান হইতে ভ্ৰষ্ট হইলে এ-দেশে যাহা অসংগত আবর্জনারূপে গণ্য হইবে, অতুকরণের মোহে তাহাকে তিনি আদর করিবেন না,-বিরোধমূলক ষে সংগ্রামশীলতা যুরোপীয় সভ্যতার স্বভাবগত, যাহা কখনোই এ-দেশের মুক্তিকায় মূলবিস্তার করিয়া ফলবান হইবে না, তাহাকে পরিত্যাগ করিয়া যে মঙ্গলময় মিলনপরতা, যে অবিচলিত ধর্মনিষ্ঠ ভারতবর্ষের চিরকালীন সাধনা, তাহাকেই বর্তমানকালের অবস্থাস্তরের সহিত তিনি সংগত করিয়া লইবার চেষ্টা করিবেন । কিন্তু তিনি কী করিবেন না-করিবেন, এ-স্থলে তাহ অনুমান ও আলোচনা করা বুথা—কেবল ইহাই সত্য যে, তাহার করার মধ্যে আমাদেরই কর্ম প্রকাশ পাইবে, দেশ তাহারই মধ্য দিয়া নিজেকে ব্যক্ত করিবে, তাহারই এক হস্ত দ্বারা নিজের প্রাপ্য গ্রহণ করিবে ও র্তাহারই অন্য হস্ত দ্বারা নিজের দান বিতরণ করিবে—-ধর্মবিরুদ্ধ না হইলে, সত্যকে লঙ্ঘন না করিলে ইহার বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করিব না এবং এই নিয়ম ও নিয়ন্তাকে স্বেচ্ছাকৃত সুতরাং অলঙ্ঘা বাধ্যতাসহকারে মান্ত করাই আমাদের প্রত্যেকের পক্ষে আত্মসম্মান বলিয়া গণ্য হইবে । এইরূপে সমস্ত বলক্ষয়কর দ্বিধা ও সমস্ত আত্মাভিমানের কুশকণ্টক সবলে উংপাটিত করিয়া যদি একের মধ্যে আমরা আমাদিগকে নিবিড়ভাবে একত্র করিতে পারি, তবে আর আমাদিগকে নিজের শক্তির অহংকার করিবার জন্য সর্বদা আস্ফালন করিতে হইবে না, পরের বিমুপতাকে ফিরাইবার জন্য প্রাণপণে অত্ব্যক্তির কষ্টি করিতে হইবে না—তবেই আমরা শান্তভাবে, বলিষ্ঠ ও ধীরভাবে মহং হইতে পারিব এবং নিজের দেশের মধ্যে নিজের যথার্থ স্থানটি অধিকার করিয়া কর্মগৌরবের মধ্যে সার্থকতা প্রাপ্ত হইয়া পোলিটিক্যাল ধতুষ্টংকারের অত্যু গ্ৰ আক্ষেপ হইতে রক্ষা পাইব—আমরা সুস্থ হইব, স্বাভাবিক হইব, সংযত-আত্মসংবৃত হইব এবং নিজের চাপল্যবিহীন মর্যাদার মধ্যে স্বপ্রতিষ্ঠ হইয়া পয়ের উপেক্ষাকে অকাতরে উপেক্ষা করিতে পারিব । “দেশনায়ক” প্রবন্ধ বরিশালে প্রাদেশিক সমিতির অধিবেশনের “বঙ্গভঙ্গ” হুইবার পর লিখিত। এই সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রবন্ধের উপক্রমণিকায় বলেন :