পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পত্রপুট পশ্চিমাসাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শাস্তিাঘাট । নম্র হল শিকলে-বাধা দানব, তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস । ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশঙ্খলতা, তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে হঠাৎ বেরিয়ে আসে ঐকেবেঁকে । তোমার নাউীতে লেগে আছে তার পাগলামি । দেবতার মন্ত্র উঠছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে দিনে রাত্রে উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্রস্বরে । তবু তোমার বক্ষের পাতাল থেকে আধাপোষা নাগদানব ক্ষণে ক্ষণে উঠছে ফণা তুলে, তার তাড়নায় তোমার আপনি জীবকে করছ আঘাত, ছারখার করছি আপনি সৃষ্টিকে । শুভে অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে, তোমার প্রচণ্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্নলাঞ্ছিত জীবনের প্রণতি । বিরাট প্ৰাণের, বিরাট মৃত্যুর গুপ্তসঞ্চার তোমার যে মাটির তলায় তাকে আজ স্পর্শ করি, উপলব্ধি করি সর্ব দেহে মনে । অগণিত যুগযুগান্তরের অসংখ্য মানুষের লুপ্ত দেহ পুঞ্জিত তার ধুলায় । আমিও রেখে যাব কয় মুষ্টি ধূলি আমার সমস্ত সুখদুঃখের শেষ পরিণামরেখে যাব এই নামগ্রাসী, আকারগ্রাসী, সকাল-পরিচয়-গ্ৰাসী নিঃশব্দ মহাধুলিরাশির মধ্যে । আচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী, গিরিশােঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যাননিমগ্না পৃথিবী, অন্নপূর্ণ তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তা তুমি ভীষণা । এক দিকে আপৱকধান্যভারনম্র তোমার শস্যক্ষেত্ৰ, সেখানে প্ৰসন্ন প্ৰভাতসূর্য প্ৰতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে । অস্তগামী সূর্য শ্যামশাস্যহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী— “আমি আনন্দিত” । অন্য দিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপাণ্ডুর মরুক্ষেত্রে পরিকীর্ণ পশুকঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্ৰেতনত্য”। o OG