পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎসর্গ কল্যাণীয়া শ্ৰীমতী রানী মহলানবীশ ইটকাঠে গড়া নীরস খাচার থেকে আকাশবিলাসী চিত্তেরে মোর এনেছিলে তুমি ডেকে শ্যামল শুশ্রুষায়, নারিকেলবন-পবন-বীজিত নিকুঞ্জ-আঙিনায় । শরৎ-লক্ষ্মী কনকমাল্যে জড়ায় মেঘের বেণী, নীলাম্বরের পটে আঁকে ছবি সুপারি গাছের শ্রেণী । দক্ষিণ ধারে পুকুরের ঘাট বাকা সে কোমর-ভাঙা, লিলি গাছ দিয়ে ঢাকা তার ঢালু ডাঙা । জামরুল গাছে ধরে অজস্ৰ ফুল, হরণ করেছে সুরবালিকার হাজার কানের দুল । লতানে যুখীর বিতানে মৌমাছিরা করিতেছে ঘুরা-ফিরা । পুকুরের তটে তটে মধুচ্ছন্দা রজনীগন্ধা সুগন্ধ তার রটে । ম্যাগনোলিয়ার শিথিল পাপড়ি খসে খসে পড়ে ঘাসে, ঘরের পিছন হতে বাতাবির ফুলের খবর আসে । একসার মোটা পায়াভারী পাম উদ্ধত মাথা-তোলা, রাস্তার ধারে দাড়িয়েছে যেন বিলিতি পাহারা-ওলা । বসি যাবে বাতায়নে কলমি শাকের পাড় দেখা যায় পুকুরের এক কোণে । বিকেল বেলার আলো জলে রেখা কাটে সবুজ সোনালি কালো । ঝিলিমিলি করে আলোছায়া চুপে চুপে চলতি হাওয়ার পায়ের চিহ্নররূপে । জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে আমের শাখায়। তমাখি ধেয়ে যায় সোনার রসের আশে । বাদুড়ের সাথে দিনে আর রাতে অতিথির ভাগ চলে । বেড়ার ওপারে মৈসুমি ফুলে রঙের স্বপ্ন বোনা, চেয়ে দেখে দেখে জানালার নাম রেখেছি- “ নেত্রকোণা” । ওরাওঁ জাতের মালী ও মালিনী ভোর হতে লেগে আছে মাটি খোড়াখুঁড়ি, জল ঢালাঢালি গাছে । গাছপালাদের স্বজাত বলেই জানে ।