পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

རི་(C) রবীন্দ্র-রচনাবলী কমল ; কাকা, আপনি আমন করে বলবেন না, আমার অদৃষ্টে যা ছিল তাই হয়েছে ইন্দু। বাবা, আসলে যার অপরাধ তাকে কিছু না বলে তার অপরাধ তোমরা পাচজনে কেন ভাগ করে নিচ্ছ, আমি তো বুঝতে পারি। নে । নিবারণ। থাক মা, সে-সব আলোচনা থাক— এখন একটা কাজের কথা বলি। কমল, মন দিয়ে শোনো । তোমাকে এতদিন গরিবের মেয়ে বলে পরিচয় দিয়ে এসেছি, সে কথাটা ঠিক নয় । তোমার বাপের সম্পত্তি নিতান্ত সামান্য ছিল না, আমারই হাতে সে-সমস্ত আছে । ইতিমধ্যে অনেক টাকা জমেছে এবং সুদেও বেড়েছে ; তোমার কুড়ি বছর বয়স হলে তবে তোমার পাবার কথা । সময় হয়েছে, এখন নাও তোমার বিষয় । সেই টানে হয়তো স্বামীও এসে পড়বে | কমল । কাকা, তাকে আপনি এ সংবাদ দেবেন না । কথাটা যাতে কেউ টের না পায়, আপনাকে তাই করতে হবে । নিবারণ । কেন বলো দেখি মা ? কমল । একটু কারণ আছে । সমস্তটা ভেবে আপনাকে পরে বলব । নিবারণ । আচ্ছা । ইন্দু | তোর মতলবটা কী আমাকে বল তো । কমল । আমি আর-একটা বাড়ি নিয়ে ছদ্মবেশে ওঁর কাছে অন্য স্ত্রীলোক বলে পরিচয় দেব । ইন্দু । সে তো বেশ হবে ভাই ! ওরা ঠিক নিজের স্ত্রীকে ভালোবেসে সুখ পায় না । কিন্তু বরাবর রাখতে পারবি তো ? কমল । বরাবর রাখবার ইচ্ছে তো আমার নেই, বোনইন্দু। ফের আবার একদিন স্বামী-স্ত্রী সাজতে হবে নাকি ? কমল । হা ভাই, যতদিন যবনিকাপাতন না হয়। ঐ শিবচরণবাবু বোধ হয় আসছেন, চলো পালাই । { উভয়ের প্রস্থান [ প্ৰস্থান গদাই ও শিবচরণের প্রবেশ শিবচরণ । দেখ, নিবারণকে আজ শেষ কথা বলব বলেই এখানে এসেছি । এখন তোর মনের কথাটা স্পষ্ট করেই বল । গদাই । আমি তো সব কথা স্পষ্ট করেই বলেছি । বিয়ে করবার কথায় এখন মন দিতেই পারছি Or শিবচরণ | এই বুড়ো বয়সে তুই যে একটা সামান্য বিষয়ে আমাকে এত দুঃখ দিবি, তা কে জানত ! গদাই । বাবা, এটা কি সামান্য বিষয় হল ! শিবচরণ । আরো বাপু, সামান্য না তো কী ? বিয়ে করা বৈ তো নয় ! রাস্তার মুটে-মজুরগুলোও যে বিয়ে করছে । ওতে তো খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করতে হয় না, বরঞ্চ কিছু টাকা খরচ আছে, তা সেও বাপমায়ে জোগায় । তুই এমন বুদ্ধিমান ছেলে, এতগুলো পাস করে শেষকালে এইখানে এসে ঠেকল ! গদাই । আপনি তো সব শুনেছেন, আমি তো বিয়ে করতে অসম্মত নই— শিবচরণ । আরে, তাতেই তো আমার বুঝতে আরো গোল বেধেছে। যদি বিয়ে করতেই আপত্তি না থাকে, তবে নাহয় একটাকে না করে আর-একটাকেই করলি । নিবারণকে কথা দিয়েছি, আমি তার কাছে মুখ দেখাই কী করে ? গদাই । নিবারণবাবুকে ভালো করে বুঝিয়ে বললেই সব— শিবচরণ । আরে, আমি নিজে বুঝতে পারি। নে ; নিবারণকে বোঝােব কী ? আমি যদি তোর মাকে বিয়ে না ক’রে তোর মাসিকে বিয়ে করবার প্রস্তাব মুখে আনতুম, তা হলে তোর ঠাকুরদাদা কি আমার দুখানা হাড় একত্র রাখত ? পড়েছিস ভালো মানুষের হাতে