পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

こ○br রবীন্দ্র-রচনাবলী গদাই ইন্দু ও কমলের প্রবেশ কমল । এখানে দাড়িয়ে আপনারা করছেন কী ? চন্দ্ৰকান্ত । সিডিশন। ইন্দু। আপনাদের সাহস তো কম নয় ! চন্দ্ৰকান্ত । শরটিহ্যান্ড-লিখিয়ে রিপোর্টার কেউ উপস্থিত ছিল না, তাই ভাষাটা হয়তো কিছু অসংযত হয়েছিল । আর কিছুই নয়, আমরা বলছিলুম, “ভাগ্যদেবীগণ, রুদ্ধদ্বার খোলো- পাপীদের ক্ষমা করবার প্রত্যক্ষ আনন্দটা ভোগ করে নাও, তাতে স্বগেরও গৌরব, মর্তেরও পরিত্রাণ ।” ইন্দু। যারা ক্ষমা করবার যোগ্য তাদের তো ক্ষমা হয়ে গেছে । চন্দ্ৰকান্ত । এত বড়ো নিষ্ঠুর কথাটা বলতে পারলেন দয়াময়ী ? দেবী, আমিই কি পাপিষ্ঠতম ? এদের দুজনের চেয়েও অধম ? ইন্দু। তিনি আপনাকে উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন । চন্দ্ৰকান্ত । দেবী, সেটা কি তার পক্ষে আমার চেয়ে কম শোচনীয় ? যিনি তারিণী তার জন্যে যদি একটা বাধা পাপীর বরাদ না থাকে। তবে তো একেবারে বেকার তিনি । যাকে বলে, আন এমপ্লয়মেন্ট প্ৰব্লেম ! বড়োবাউ, তোমার অনুপস্থিতিতে যদি দৈবাৎ আমার সংশোধন হয়ে যায়, যদি তোমার জন্যে সবুর করতে না পারি, যদি পরিত্রাণের দোসরা পথ জুটে যায়, তা হলে সেটাতে কি তোমারই যশ না আমারই ! ক্ষান্তমণির প্রবেশ ক্ষান্তমণি ।। আঃ, কী মিছেমিছি চেচাচ্ছিা! চন্দ্ৰকান্ত । মিছেমিছি নয় দেবী ! পৃথিবীসুদ্ধ লোক চেঁচাচ্ছে পরিত্রাণের দরবারে— কেউ-বা ধর্মে, কেউ-বা কর্মে, কেউ-বা পলিটিকসে, আর আমিই যদি চুপ করে থাকিব তা হলে নিতান্তই ঠকব যে । এই দুটি ভাগ্যবানদের দিকে তাকিয়ে আমি আর থাকতে পারলুম না। একটু চেচিয়েছি, ফলও পেয়েছি— এখন যবনিকাপতনের পূর্বে দয়াময়ীদের বন্দনােটা সেরে নিই। গান । প্ৰথমে চন্দ্ৰকান্ত পরে সকলে মিলিয়া বাউলের সুর যার অদৃষ্টে যেমনি জুটেছে সেই আমাদের ভালো । আমাদের এই আঁধার ঘরে সন্ধ্যাপ্ৰদীপ জ্বলো । কেউ-বা অতি জ্বলজ্বল, কেউ-বা মান ছলছলকেউ-বা কিছু দহন করে, কেউ-বা স্নিগ্ধ আলো । নূতন প্রেমে নূতন বধু আগাগোড়া কেবল মধু, পুরাতনে অম্ল-মধুর- একটুকু ঝাঝালো । বাক্য যখন বিদায় করে চক্ষু এসে পায়ে ধরে, রাগের সঙ্গে অনুরাগে সমান ভাগে ঢালো । আমরা তৃষ্ণা তোমরা সুধা, তোমরা তৃপ্তি আমরা ক্ষুধা, তোমার কথা বলতে কবির কথা ফুরালো । যে মূর্তি নয়নে জাগে সবই আমার ভালো লাগেকেউ-বা দিব্যি গৌরবরন, কেউ-বা দিব্যি কালো ।