পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিত্ৰাণ Հ8Գ মন্ত্রী । মহারাজ, এ কথা গোপন থাকবে না । প্ৰতাপ । কিসে তুমি জানলে ? মন্ত্রী । আপনার পিতৃব্যের প্রতি বিদ্বেষ আপনি তো কোনোদিন লুকোতে পারেন নি। এমন-কি, আপনার কন্যার বিবাহেও আপনি তাকে নিমন্ত্রণ করেন নি- তিনি বিনা নিমন্ত্রণেই এসেছিলেন । আর আজ আপনি অকারণে তাকে নিমন্ত্রণ করলেন, আর পথে এই কাণ্ডটি ঘটল, এমন অবস্থায় প্ৰজারা আপনাকেই মূল বলে জানবে। প্ৰতাপ । তা হলেই তুমি খুব খুশি হও ! না ? মন্ত্রী । মহারাজ, এমন কথা কেন বলছেন ? আপনার ধর্ম-অধৰ্ম পাপ-পুণ্যের বিচার আমি করি নে, কিন্তু রাজ্যের ভালোমন্দর কথাও যদি আমাকে ভাবতে না দেবেন। তবে আমি আছি কী করতে ? প্ৰতাপ । আচ্ছা, ভালোমন্দর কথাটা কী ঠাওরালে শুনি । মন্ত্রী । আমি এই কথাই বলছি, পদে পদে প্রজাদের মনে অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলবেন না । দেখুন, মাধবপুরের প্রজারা খুব প্রবল এবং আপনার বিশেষ বাধ্য নয় । তারা রাজ্যের সীমানার কাছে থাকে পাছে আপনার প্রতিবেশী শত্রুপক্ষের সঙ্গে যোগ দেয়, এই ভয়ে তাদের গায়ে হাত তোলা যায় না । সেইজন্য মাধবপুর-শাসনের ভার যুবরাজের উপর দেবার কথা আমিই মহারাজকে বলেছিলেম । প্ৰতাপ । সে তো বলেছিলে । তার ফল কী হল দেখো-না । আজ দুবৎসরের খাজনা বাকি । সকল মহল থেকে টাকা এল, আর ওখান থেকে কী আদায় হল ? মন্ত্রী । আজ্ঞে, আশীৰ্বাদ । তেমন সব বজাত প্ৰজাও যুবরাজের পায়ের গোলাম হয়ে গেছে। টাকার চেয়ে কি তার কম দাম ? সেই যুবরাজের কাছ থেকে আপনি মাধবপুরের ভার কেড়ে নিলেন । সমস্তই উলটে গেল । এর চেয়ে তাকে না পাঠানোই ভালো ছিল । সেখানকার প্রজারা তো হন্যে কুকুরের মতো ক্ষেণে রয়েছে- তার পরে যদি এই কথাটা প্ৰকাশ হয়, তা হলে কী হয় বলা যায় না । রাজকাৰ্যে ছোটোদের অবজ্ঞা করতে নেই মহারাজ ! অসহ্য হলেই ছোটোরা জোট বাধে, জোট বাধলেই ছোটোরা বড়ো হয়ে ওঠে । প্ৰতাপ । সেই ধনঞ্জয় বৈরাগী তো মাধবপুরে পাকে ? মন্ত্রী । আজ্ঞে হঁহা । প্ৰতাপ । সেই বেটাই যত নষ্টের গোড়া । ধর্মের ভেক ধরে সেই তো যত প্ৰজাকে নাচিয়ে তোলে । সেই তো প্রজাদের পরামর্শ দিয়ে খাজনা বন্ধ করিয়েছে। উদয়কে বলেছিলুম। যেমন করে হােক তাকে আচ্ছা করে শাসন করে দিতে ; কিন্তু উদয়কে জান তো ? এ দিকে তার না আছে তেজ, না আছে পৌরুষ, কিন্তু একণ্ঠয়েমির অস্ত নেই। ধনঞ্জয়কে শাসন দূরে থাক তাকে আস্পর্ধা দিয়ে বাড়িয়ে তুলেছে। এবারে তার কঠিসুদ্ধ কণ্ঠ চেপে ধরতে হচ্ছে, তার পরে দেখা যাবে তোমার মাধবপুরের প্রজাদের কত বড়ো বুকের পাটা !! আর দেখো, লোকজন আজই সব ঠিক করে রাখে- খবরটা পাবামাত্রই রায়গড়ে গিয়ে বসতে হবে । সেইখানেই শ্ৰাদ্ধশান্তি করব- আমি ছাড়া উত্তরাধিকারী আর তো কাউকে দেখি নে । বসন্তরায়ের প্রবেশ । প্রতাপাদিত্য চমকিত হইয়া দণ্ডায়মান বসন্ত । আমাকে কিসের ভয় প্ৰতাপ ? আমি তােমার পিতৃব্য, তাতেও যদি বিশ্বাস না হয় আমি বৃদ্ধ, তোমার কোনো অনিষ্ট করি এমন শক্তি নেই। [ প্ৰতাপ নীরব প্ৰতাপ, একবার রায়গড়ে চলো- ছেলেবেলা কতদিন সেখানে কাটিয়েছ- তার পরে বহুকাল সেখানে যাও নি । প্ৰতাপ । (নেপথ্যের দিকে চাহিয়া সগৰ্জনে) খবরদার !! ঐ পাঠানকে ছাড়িসা নে ! [দ্রত প্ৰস্থান