পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিত্রাণ ૨ (? જે যা-কিছু আছে সব কাড়ো কাড়ো । এবার যা করবার তা সারো সারে । আমি হারি কিংবা তুমিই হারো । হাটে ঘাটে বাটে করি মেলা, কেবল হেসে খেলে গেছে বোলাদেখি কেমনে কঁদাতে পার । দ্বিতীয় । আচ্ছা ঠাকুর, তুমি কোথায় চলেছ বলে দেখি ? ধনঞ্জয় । যশোর যাচ্ছি রে । তৃতীয় । কী সর্বনাশ । সেখানে কী করতে যাচ্ছি। ধনঞ্জয় । একবার রাজাকে দেখে আসি । চিরকাল কি তোদের সঙ্গেই কটাব ? এবার রাজ-দরবারে নাম রেখে আসিব । চতুর্থ। তোমার উপরে রাজার যে ভারি রাগ। তার কাছে গেলে কি তোমার রক্ষা আছে। পঞ্চম । জান তো, যুবরাজ তোমাকে শাসন করতে চায় নি বলে তাকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে গেল । ধনঞ্জয় । তোরা যে মার সইতে পারিস নে । সেইজন্যে, তোদের মারগুলো সব নিজের পিঠে নেবার জন্যে স্বয়ং রাজার কাছে চলেছি । পেয়াদা নয় রে পেয়াদা নয়- যেখানে স্বয়ং মারের বাবা বসে আছে সেইখানে ছুটেছি। প্ৰথম । না না, সে হবে না ঠাকুর, সে হবে না । ধনঞ্জয় । খুব হবে- পেট ভরে হবে, আনন্দে হবে । প্ৰথম । তবে আমরাও তোমার সঙ্গে যাব । ধনঞ্জয় । পেয়াদার হাতে আশ মেটে নি বুঝি ? দ্বিতীয় । না ঠাকুর, সেখানে একলা যেতে পারছি না, আমরাও সঙ্গে যাব । ধনঞ্জয় । আচ্ছা, যেতে চাস তো চল । একবার শহরটা দেখে আসবি । তৃতীয় । কিছু হাতিয়ার সঙ্গে নিতে হবে । ধনঞ্জয় । কেন রে ? হাতিয়ার নিয়ে কী করবি ? তৃতীয় । যদি তোমার গায়ে হাত দেয় তা হলে— ধনঞ্জয় । তা হলে তোরা দেখিয়ে দিবি হাত দিয়ে না মেরে কী করে হাতিয়ার দিয়ে মারতে হয় । কী আমার উপকারটা করতেই যােচ্ছ! তোদের যদি এইরকম বুদ্ধি হয়, তবে এইখানেই থাক । , চতুর্থ। না না, তুমি যা বলবে তাই করব, কিন্তু আমরা তোমার সঙ্গে থাকব । তৃতীয় । আমরাও রাজার কাছে দরবার করব । * ধনঞ্জয় । কী চাইবি রে ? তৃতীয় । আমরা যুবরাজকে চাইব । ধনঞ্জয় । বেশ, বেশ, অর্ধেক রাজত্ব চাইবি নে ? তৃতীয় । ঠাট্টা করছি ঠাকুর ! ধনঞ্জয় । ঠাট্টা-কেন করব । সব রাজত্বটাই কি রাজার । অর্ধেক রাজত্ব প্ৰজার নয় তো কী । চাইতে দোষ নেই রে । চেয়ে দেখিস । চতুর্থ। যখন তাড়া দেবে ? ধনঞ্জয় । তখন আবার চাইব । তুই কি ভাবিস রাজা একলা শোনে । আরো একজন শোনবার লোক দরবারে বসে থাকেন— শুনতে শুনতে তিনি একদিন মঞ্জুর করেন, তখন রাজার তাড়াতে কিছুই ক্ষতি হয় না ।