পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WDG 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী করতে আসেন নি বলে ভারি দুঃখিত হলেন- বলে দিলেন, আজই দুপুরবেলা। তিনি গোপনে তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন ।” আর কেহ হইলে কথাটার অসম্ভকতা বুঝিতে পারিত এবং আর-কাহারো সম্বন্ধে হইলে কৈলাসকবুও এ কথায় হাস্য করিতেন। কিন্তু নিজের সম্বন্ধীয় বলিয়া এ সংবাদ তাহার লেশমাত্র অবিশ্বাস্য বোধ হইল না । শুনিয়া যেমন খুশি হইলেন তেমনি অস্থির হইয়া উঠিলেন কোথায় বসাইতে হইবে, কী করিতে হইবে, কেমন করিয়া অভ্যর্থনা করিবেন, কী উপায়ে নয়নজোড়ের গৌরব রক্ষিত হইবে, কিছুই ভাবিয়া পাইলেন না । তাহা ছাড়া তিনি ইংরাজি জানেন না, কথা চালাইবেন কী করিয়া GP3 (4R5 2.PNPUT | আমি বলিলাম, “সেজন্য ভাবনা নাই, তাহর সঙ্গে একজন করিয়া দোভাবী থাকে ; কিন্তু ছোটোলাটি-সাহেবের বিশেষ ইচ্ছ, আর কেহ উপস্থিত না থাকে ৷” মধ্যাহ্নে পাড়ার অধিকাংশ লোক যখন আপিসে গিয়াছে এবং অবশিষ্ট অংশ দ্বার রুদ্ধ করিয়া নিদ্রািময়, তখন কৈলাসবাবুর বাসার সম্মুখে এক জুড়ি আসিয়া দাড়াইল । DTDBLS0BB S BBBB S BBB S BBB S DBDS SBBBDSBBB S S BBB S DBB প্রাচীনকাল-প্রচলিত শুভ্ৰ জামাজোড়া এবং পাগড়ি পরিয়া প্ৰস্তুত হইয়া ছিলেন, তাহার পুরাতন ভূত্য গণেশটিকেও তাহার নিজের ধুতি চাদর জামা পরাইয়া ঠিকঠাক করিয়া রাখিয়াছিলেন । ছোটোলাটের আগমন সংবাদ শুনিয়াই হাঁপাইতে হাঁপাইতে কঁাপিতে কঁাপিতে ছুটিয়া দ্বারে গিয়া উপস্থিত হইলেনএবং সত্নতদেহে বারংবার সেলাম করিতে করিতে ইংরেজবেশধারী আমার এক প্রিয় বয়স্যকে ঘরে | d८ ! সেখানে চৌকির উপরে তাহার একমাত্র বহুমূল্য শালটি পাতিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহারই উপর স্বরূপে স্বর্ণব্লেকাবিতে তাহদের বহুকষ্টরক্ষিত কুলক্ৰমাগত এক আসরফির মালা ধরিলেন । প্রাচীন ভূত্য গণেশ গোলাপপাশ, এবং আতরদান লইয়া উপস্থিত ছিল । কৈলাসবাবু বারংবার আক্ষেপ করিতে লাগিলেন যে, তাহদের নয়নজোড়ের বাড়িতে হজুরবাহাদুরের পদধূলি পড়িলে তাহদের যথাসাধ্য যথোচিত আতিথ্যের আয়োজন করিতে পারিতেন- কলিকাতায় তিনি প্রবাসী- এখানে তিনি জলহীন মীনের ন্যায় সর্ববিষয়েই অক্ষমইত্যাদি । আমার বন্ধু দীর্ঘ হ্যাট সমেত অত্যন্ত গষ্ঠীরভাবে মাথা নাড়িতে লাগিলেন । ইংরেজি কায়দা-অনুসারে এরূপ স্থলে মাথায় টুপি না থাকিবার কথা কিন্তু আমার বন্ধু ধরা পড়িবার ভয়ে যথাসম্ভব। আচ্ছল্প থাকিবার চেষ্টায় টুপি খোলেন নাই । কৈলাসবাবু এবং তাহার গর্বািন্ধ প্ৰাচীন ভূত্যটি ছাড়া আর-সকলেই মুহুর্তের মধ্যে বাঙালির এই ছদ্মবেশ ধরিতে পারিত । দশ মিনিট কাল ঘাড় নাড়িয়া আমার বন্ধু গাত্ৰোখান করিলেন এবং পূর্ব-শিক্ষা-মন্ত চাপরাশিগণ এবং আতরদান সংগ্ৰহ করিয়া ছদ্মবেশীর গাড়িতে তুলিয়া দিল- কৈলাসবাবু বুঝিলেন, ইহাই ছোটোলাটের প্রথা । আমি গোপনে এক পাশের ঘরে লুকাইয়া দেখিতেছিলাম এবং রুদ্ধ হাস্যবেগে আমার পাজার বিদীর্ণ হইবার উপক্রম হইতেছিল । অবশেষে কিছুতে আর থাকিতে না পারিয়া ছুটিয়া কিঞ্চিৎ দূরবতী এক ঘরের মধ্যে গিয়া প্ৰবেশ। করিলাম— এবং সেখানে হাসির উচ্চািস উন্মুক্ত করিয়া দিয়া হঠাৎ দেখি, একটি বালিকা তক্তপোশের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কঁদিতেছে । আমাকে হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করিয়া হাসিতে দেখিয়া সে তৎক্ষণাৎ তত্তল ছাড়িয়া দাড়াইল, এবং অশ্রীরস্থ কণ্ঠে রোফের গর্জন আনিয়া, আমার মুখের উপর সজল বিপুল কৃষ্ণচক্ষের সুতীব্রু বিদ্যুৎ বর্ষণ করিয়া কহিল, “আমার দাদামশায় তোমাদের কী করেছেন- কেন তোমরা তাকে ঠকাতে