পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छॉoान-शार्दी 8の> না ; দুধ মথন করলে মাখনটা যেরকম ছিন্ন হয়ে আসে প্ৰাণটা যেন তেমনি হয়ে এসেছে। জাহাজের উপরকার দোলা সহ্য করা যায়, জাহাজের ভিতরকার দোলা সহ্য করা শক্ত । কাকরের উপর দিয়ে চলা আর জুতার ভিতরে কাকর নিয়ে চলার যে তফাত, এ যেন তেমনি । একটাতে মার আছে বন্ধন নেই, আর একটাতে বেঁধে মার। ক্যাবিনে শুয়ে শুয়ে শুনতে পেলুম, ডেকের উপর কী যেন হুড়মুড় করে ভেঙে ভেঙে পড়ছে। ক্যাবিনের মধ্যে হাওয়া আসবার জন্যে যে ফানেলগুলো ডেকের উপর ইহা করে নিশ্বাস নেয়, ঢাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু ঢেউয়ের প্রবল চোটে তার ভিতর দিয়েও ঝলকে ঝলকে ক্যাবিনের মধ্যে জল এসে পড়ছে। বাইরে উনপঞ্চাশ বায়ুর নৃত্য, অথচ ক্যাবিনের মধ্যে গুমটি । একটা ইলেকট্রিক পাখা চলছে তাতে তাপটা যেন গায়ের উপর ঘুরে ঘুরে লেজের ঝাপটা দিতে व्लांकोळेना | হঠাৎ মনে হয়, এ একেবারে অসহ্য । কিন্তু, মানুষের মধ্যে শরীর-মন-প্ৰাণের চেয়েও বড়ো একটা সত্তা আছে। ঝড়ের আকাশের উপরেও যেমন শান্ত আকাশ, তুফানের সমুদ্রের নীচে যেমন শান্ত সমুদ্র, সেই আকাশ সেই সমুদ্রই যেমন বড়ো, মানুষের অন্তরের গভীরে এবং সমুচ্চে সেইরকম একটি বিরাট শান্ত পুরুষ আছে- বিপদ এবং দুঃখের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে দেখলে তাকে পাওয়া যায়- দুঃখ তার পায়ের তলায়, মৃত্যু তাকে স্পর্শ করে না । সন্ধ্যার সময় ঝড় থেমে গেল । উপরে গিয়ে দেখি, জাহাজটা সমুদ্রের কাছে এতক্ষণ ধরে যে চড়াচাপড় খেয়েছে তার অনেক চিহ্ন আছে । কাপ্তেনের ঘরের একটা প্রাচীর ভেঙে গিয়ে তার আসবাবপত্র সমস্ত ভিজে গেছে । একটা বাধা লাইফ-বোট জখম হয়েছে | ডেকে প্যাসেঞ্জারদের একটা ঘর এবং ভাণ্ডারের একটা অংশ ভেঙে পড়েছে। জাপানি মাল্লারা এমন-সকল কাজে প্রবৃত্ত ছিল যাতে প্ৰাণসংশয় ছিল। জাহাজযে বার বার আসন্ন সংকটের সঙ্গে লড়াই করেছে তার একটা স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেল- জাহাজের ডেকের উপর কর্কের তৈরি সাতার দেবার জামাগুলো সাজানো । একসময়ে এগুলো বের করবার কথা কাপ্তেনের মনে এসেছিল । কিন্তু, এই ঝড়ের পালার মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট করে আমার মনে পড়ছে জাপানি মাল্লাদের হাসি । শনিবার দিনে আকাশ প্ৰসন্ন কিন্তু সমুদ্রের আক্ষেপ এখনো ঘোচে নি। আশ্চর্য এই ঝড়ের সময় জাহাজ এমন দোলে নি ঝড়ের পর যেমন তার দোলা । কালকেকার উৎপাতকে কিছুতেই যেন সে ক্ষমা করতে পারছে না, ক্রমাগতই ফুপিয়ে ফুপিয়ে উঠছে। শরীরের অবস্থাটাও অনেকটা সেইরকম ; ঝড়ের সময় সে একরকম শক্ত ছিল কিন্তু পরের দিন ভুলতে পারছে না, তার উপর দিয়ে ঝড় গিয়েছে । আজ রবিবার । জলের রঙ ফিকে হয়ে উঠেছে। এতদিন পরে আকাশে একটি পাখি দেখতে । পেলুম— এই পাখিগুলিই পৃথিবীর বাণী আকাশে বহন করে নিয়ে যায় ; আকাশ দেয় তার আলো, পৃথিবী দেয়। তার গান । সমুদ্রের যা-কিছু গান সে কেবল তার নিজের ঢেউয়ের- তার কোলে জীব আছে যথেষ্ট, পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু তাদের কারো কণ্ঠে সুর নেই ; সেই অসংখ্য বোবা জীবের হয়ে সমুদ্র নিজেই কথা কচ্ছে। ডাঙার জীবেরা প্ৰধানত শব্দের দ্বারাই মনের ভাব প্রকাশ করে, জলচরদের ভাষা হচ্ছে গতি । সমুদ্র হচ্ছে নৃত্যলোক, আর পৃথিবী হচ্ছে শব্দলোক । আজ বিকেলে চারটে-পাচটার সময় রেঙ্গুনে পৌছবার কথা । মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত পৃথিবীতে নানা খবর চলাচল করছিল, আমাদের জন্যে সেগুলো সমস্ত জমে রয়েছে ; বাণিজ্যের ধানের মতো নয় প্রতিদিন যার হিসাব চলছে, কোম্পানির কাগজের মতো অগোচরে যার সুদ জমছে । N8 KNR y SoSo