পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊा°ान-याङ्की 8 ՀԳ বাড়ির ভিতরকার সমস্ত ঘর এবং পথ মাদুর দিয়ে মোড়া, সেই মাদুরের নীচে শক্ত খড়ের গদি ; তাই এদের ঘরের মধ্যে যেমন পায়ের ধুলো পড়ে না তেমনি পায়ের শব্দও হয় না । দরজাগুলো ঠেলা দরজা, বাতাসে যে ধড়ফবড় পড়বে এমন সম্ভাবনা নেই। আর-একটা ব্যাপার এই- এদের বাড়ি জিনিসটা অত্যন্ত অধিক নয় । দেয়াল, কড়ি, বরগা, জানলা, দরজা, যতদূর পরিমিত হতে পারে তাই। অর্থাৎ, বাড়িটা মানুষকে ছাড়িয়ে যায় নি, সম্পূর্ণ তার আয়ত্তের মধ্যে । একে মাজা-ঘষা ধোওয়া-মোছা দুঃসাধ্য নয় । তার পরে, ঘরে যেটুকু দরকার তা ছাড়া আর কিছু নেই। ঘরের দেয়াল-মেঝে সমস্ত যেমন পরিষ্কার তেমনি ঘরের ফাকিটুকুও যেন তকতক করছে ; তার মধ্যে বাজে জিনিসের চিহ্নমাত্র পড়ে নি। মন্ত সুবিধে এই যে, এদের মধ্যে যাদের সাবেক চাল আছে তারা চৌকি টেবিল একেবারে ব্যবহার করে না । সকলেই জানে, চৌকি টেবিলগুলো জীব নয় বটে কিন্তু তারা হাত-পা-ওয়ালা । যখন তাদের কোনো দরকার নেই তখনো তারা দরকারের অপেক্ষায় হঁহা করে দাড়িয়ে থাকে । অতিথিরা আসছে। যাচ্ছে, কিন্তু-অতিথিদের এই খাপগুলি জায়গা জুড়েই আছে। এখানে ঘরের মেঝের উপরে মানুষ বসে, সুতরাং যখন তারা চলে যায়। তখন ঘরের আকাশে তারা কোনো বাধা রেখে যায় না। ঘরের একধারে মাদুর নেই, সেখানে পালিশ-করা কাষ্ঠখণ্ড ঝকঝকি করছে, সেইদিকের দেয়ালে একটি ছবি ঝুলছে, এবং সেই ছবির সামনে সেই তক্তাটির উপর একটি ফুলদানির উপরে ফুল সাজানো। ঐ যে ছবিটি আছে। ওটা আড়ম্বরের জন্যে নয়, ওটা দেখবার জন্যে । সেইজন্যে যাতে ওরা গা ঘেঁষে কেউ না ? বসতে পারে, যাতে ওর সামনে যথেষ্ট পরিমাণে অব্যাহত অবকাশ থাকে, তারই ব্যবস্থা রয়েছে। সুন্দর জিনিসকে যে এরা কত শ্ৰদ্ধা করে, এর থেকেই তা বোঝা যায়। ফুল-সাজানোও তেমনি । অন্যত্র নানা ফুল ও পাতাকে ঠেসে একটা তোড়ার মধ্যে বেঁধে ফেলো- ঠিক যেমন করে বারুণীযোগের সময় তৃতীয়শ্রেণীর যাত্রীদের এক গাড়িতে ভরতি করে দেওয়া হয়, তেমনি— কিন্তু এখানে ফুলের প্রতি সে অত্যাচার হবার জো নেই ; ওদের জন্যে থার্ড ক্লাসের গাড়ি নয়, ওদের জন্যে রিজার্ভ-করা সেলুন । ফুলের সঙ্গে ব্যবহারে এদের না আছে দাঁড়াদড়ি, না আছে ঠেলা ঠেলি, না আছে হট্টগোল । ভোরের বেলা উঠে জানলার কাছে আসন পেতে যখন বসলুম তখন বুঝলুম, জাপানিরা কেবল যে শিল্পকলায় ওস্তাদ তা নয়, মানুষের জীবনযাত্রাকে এরা একটি কলাবিদ্যার মতো আয়ত্ত করেছে। এরা এটুকু জানে যে-জিনিসের মূল্য আছে, গৌরব আছে, তার জন্যে যথেষ্ট জায়গা ছেড়ে দেওয়া চাই। পূর্ণতার জন্যে রিক্ততা সবচেয়ে দরকারি । বস্তুবাহুল্য জীবনবিকাশের প্রধান বাধা । এই সমস্ত বাড়িটির মধ্যে কোথাও একটি কোণেও একটু অনাদর নেই, অনাবশ্যকতা নেই। চোখকে মিছিমিছি কোনো জিনিস আঘাত করছে না, কানকে বাজে কোনো শব্দ বিরক্ত করছে না । মানুষের মন নিজেকে যতখানি ছড়াতে চায় ততখানি ছড়াতে পারে, পদে পদে জিনিসপত্রের উপরে ঠোকর খেয়ে পড়ে না । যেখানে চারি দিকে এলোমেলো, ছড়াছড়ি, নানা জঞ্জাল, নানা আওয়াজ, সেখানে যে প্রতি মুহুর্তেই আমাদের জীবনের এবং মনের শক্তিক্ষয় হচ্ছে সে আমরা অভ্যাসবশত বুঝতে পারি নে। আমাদের চারি দিকে যা-কিছু আছে সমস্তই আমাদের প্রাণমনের কাছে কিছু-না-কিছু আদায় করছেই। যে-সব জিনিস অদরকারি এবং অসুন্দর তারা আমাদের কিছুই দেয় না, কেবল আমাদের কাছে থেকে নিতে থাকে । এমনি করে নিশিদিন আমাদের যা ক্ষয় হচ্ছে, সেটাতে আমাদের শক্তির কম অপব্যয় হচ্ছে of সেদিন সকালবেলায় মনে হল, আমার মন যেন কানায় কানায় ভরে উঠেছে। এতদিন যেরকম করে। মনের শক্তি বহন করেছি। সে যেন চালুনিতে জল ধরা, কেবল গোলমালের ছিদ্র দিয়ে সমন্ত বেরিয়ে গেছে ; আর, এখানে এ যেন ঘটের ব্যবস্থা । আমাদের দেশের ক্রিয়াকর্মের কথা মনে হল । কী প্রচুর অপব্যয় । কেবলমাত্র জিনিসপত্রের গণ্ডগোল নয়— মানুষের কী চেঁচামেচি, দুটােছুটি, গলা-ভাঙাভাঙি । আমাদের নিজের বাড়ির কথা মনে হল । বাকাচোরা উচুনিচু রাস্তার উপর দিয়ে গোরুর গাড়ি চলার মতো সেখানকার জীবনযাত্রা । যতটা চলছে তার চেয়ে আওয়াজ হচ্ছে ঢের Soti Sb