পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 8ఆపి দোহাই পাড়লে । আজ সকল পক্ষই বিষের সন্ধানে উঠে পড়ে লেগেছে ; যুদ্ধকালে নিরস্ত্ৰ পুরবাসীদের প্রতি আকাশ থেকে অগ্নিবাণ বর্ষণ নিয়ে প্রথমে শোনা গেল ধর্মবুদ্ধির নিন্দবাণী । আজ দেখি, ধামিকেরা স্বয়ং সামান্য কারণে পল্লীবাসীদের প্রতি কথায় কথায় পাপবীজ সন্ধান করছে। গত যুদ্ধের সময় শক্রির সম্বন্ধে নানা উপায়ে সজ্ঞানে সচেষ্টভাবে সত্যগোপন ও মিথ্যা-প্রচারের শয়তানি অস্ত্ৰ ব্যবহার প্রকাণ্ডভাবে চলল। যুদ্ধ থেমেছে কিন্তু সেই শয়তানি আজও থামে নি । এমন-কি, অক্ষম ভারতবর্ষকেও প্রবলের প্রপাগাণ্ডা রেয়াত করে না। এই সব নীতি হচ্ছে সবুর-না-করা নীতি ; এরা হল পাপের দ্রুত চাল ; এরা প্ৰতি পদেই বাহিরে জিতছে বটে। কিন্তু সে জিত অন্তরের মানুষকে হারিয়ে দিয়ে। মানুষ আজ নিজের মাথা থেকে জয়মাল্য খুলে নিয়ে কলের গলায় পরিয়ে দিলে । রসাতল থেকে দানব’ বলছে, “বাহবা৷ ”- রাখীরে কহিল গৃহী উৎকণ্ঠায় উধৰ্ব্বস্বরে ডাকি, “থামো, থামো, কোথা তুমি রুদ্রবেগে রথ যাও হাকি, সম্মুখে আমার গৃহ ।” রাখী কহে, “ওই মোর পথ, ঘুরে গেলে দেরি হবে, বাধা ভেঙে সিধা। যাবে রথ ।” গৃহী কহে, “নিদারুণ ত্বরা দেখে মোর ডর লাগে-- কোথা যেতে হবে বলে ।” রাখী কহে, “ যেতে হবে। আগে ।” “কোনখানে” শুধাইল । রাখী বলে, “কোনোখানে নহে, শুধু আগে ।” “কোন তীর্থে, কোন সে মন্দিরে” গৃহী কহে } “কোথাও না, শুধু আগে।” “কোন বন্ধু সাথে হবে দেখা ।” “কারো সাথে নহে, যাব সব আগে আমি মাত্র একা ।” ঘর্ঘরিত রথবেগ গৃহভিত্তি করি দিল গ্রাস ; হাহাকারে, অভিশাপে, ধূলিজালে ক্ষুভিল বাতাস সন্ধ্যার আকাশে ! আঁধারের দীপ্ত সিংহদ্বার-বাগে রক্তবর্ণ অস্তপথে ছোটে রথ লক্ষ্যশূন্য আগে । ক্রাকোভিয়া জাহাজ ৯ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ <5 বিষয়ী লোক শতদলের পাপড়ি ছিড়ে ছিড়ে একটি করে জমা করে আর বলে, “ পেয়েছি!” তার সঞ্চয় মিথ্যে । সংশয়ী লোক শতদলের পাপড়ি একটি একটি করে ছিড়ে ছিড়ে তাকে কেটে কুটে নিঙড়ে মুচড়ে বলে, “পাই নি !” অর্থাৎ, সে উলটাে দিকে চেয়ে বলে, “নেই ।” রসিক লোক সেই শতদলের দিকে “আশ্চর্যাবৎ পশ্যতি” । এই আশ্চর্যের মানে হল পেয়েছি পাই—নি দুই-ই সত্য । প্রেমিক বললে, “লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখানু, তবু হিয়ে জুড়ন না গেল।” অর্থাৎ, বললে লক্ষ্যযুগের পাওয়া অল্পকালের মধ্যেই পেয়েছি। আবার সেই সঙ্গেই লক্ষ্যযুগের না-পাওয়াও লেগেই রইল । সময়টা যে আপেক্ষিক, রসের ভাষায় সে কথাটা অনেকদিন থেকে বলা চলছে, বিজ্ঞানের ভাষায় আজ বলা হল ।