পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী G. S \S) অনেক উচু উচু আসন অধিকার করে বসে আছে। তারা কেউ-বা শিক্ষক, কেউ-বা বিচারক, কেউ-বা শাসনকর্তা, কেউ-বা। ধর্মযাজক। কত ঝি, দাই, চাকর, মালী, কুমোর, চাষি আছে যারা ওদের মতো শূদ্ৰ নয়— আজকের এই রৌদ্রে-উজ্জ্বল সমুদ্রতীরের নারকেলগাছের মর্মরে তাদের জীবনসংগীতের মূল সুরটি বাজছে । ठळ ২৮শে জুলাই ১৯২৭ V কল্যাণীয়াসু এখনই দুশো মাইল দূরে এক জায়গায় যেতে হবে । সকলেই সাজসজ্জা করে জিনিসপত্র বেঁধে প্ৰস্তুত ; কেবল আমিই তৈরি হয়ে নিতে পারি নি। এখনই রেলগাড়ির উদ্দেশে মোটরগাড়িতে চড়তে হবে । দ্বারের কাছে মোটরগাড়ি উদ্যত তারস্বরে মাঝে মাঝে শৃঙ্গ ধ্বনি করছে- আমাদের সঙ্গীদের কণ্ঠে তেমন জোর নেই, কিন্তু তাদের উৎকণ্ঠা কম প্ৰবল নয় । অতএব, এইখানেই উঠতে হল । দিনটি চমৎকার । নারকেলগাছের পাতা ঝিলমিল করছে, ঝরঝর করছে, দুলে দুলে উঠছে, সামনেই সমুদ্র স্বাগত-উক্তিতে অবিশ্রাম কলধ্বনিমুখরিত । ब्द ৩০শে জুলাই ১৯২৭ * ༤ কল্যাণীয়াসু রানী, এসেছি। গিয়ানিয়ার রাজবাড়িতে। মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বে সুনীতি রাজবাড়ির ব্ৰাহ্মণ পুরোহিতদের নিয়ে খুব আসার জমিয়ে তুলেছিলেন । খেতে বসে রাজা আমাকে বললেন একটু সংস্কৃত আওড়াতে । দু-চার রকমের শ্লোক আওড়ানো গেল । সুনীতি একটি শ্লোকের পরিচয় দিতে গিয়ে যেমনি বললেন “শার্দুলবিক্রীড়িত” অমনি রাজা সেটা উচ্চারণ করে জানালেন, তিনিও জানেন । এখানকার রাজার মুখে অত বড়ো একটা কড়া সংস্কৃত শব্দ শুনে আমি তো আশ্চর্য । তার পরে রাজা বলে গেলেন, শিখরিণী, স্ৰন্ধরা, মালিনী, বসন্ততিলক, আরো কতকগুলো নাম যা আমাদের অলংকারশাস্ত্রে কখনো পাই নি । বললেন, তাদের ভাষায় এ-সব ছন্দ প্ৰচলিত । অথচ, মন্দাক্রান্তা বা অনুষ্টিভ এরা জানেন না । এখানে ভারতীয় বিদ্যার এই সব ভাঙাচোরা মূর্তি দেখে মনে হয় যেন ভূমিকম্প হয়ে একটা প্রাচীন মহানগরী ধ্বসে গিয়েছে, মাটির নীচে বসে গিয়েছে- সেই সব জায়গায় উঠেছে। পরবতী কালের ঘরবাড়ি চাষ-আবাদ ; আবার অনেক জায়গায় সেই পুরোনো কীর্তির অবশেষ উপরে জেগে, এই দুইয়ে মিলে জোড়া-তাড়া দিয়ে এখানকার লোকালয় । সেকালের ভারতবর্ষের যা-কিছু বাকি আছে তার থেকে ভারতের তখনকার কালের বিবরণ অনেকটা আন্দাজ করা যায় । এখানে হিন্দুধর্ম প্রধানতই শৈব । দুৰ্গা আছেন। কিন্তু কপালমালিনী লোলরিসন উলঙ্গিনী কালী নেই। কোনো দেবতার কাছে পশুবলি এরা জানে না। কিছুকাল আগে অশ্বমেধ প্রভৃতি যজ্ঞ উপলক্ষে পশুবথ হত, কিন্তু দেবীর কাছে জীবরক্ত নৈবেদ্য দেওয়া হত না । এর ১ নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখিত ।