পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী « ՏԳ নেই, অবকাশ নেই- তার পরে সুদীর্ঘ রেলযাত্রা ; তার পরে স্টেশনে মাল্যগ্ৰহণ, অ্যাড্রেস-শ্রবণ, তদুত্তরে বিনতিপ্ৰকাশ ; তার পরে নতুন বাসায় নতুন জনতার মধ্যে জীবনযাত্রার নতুন ব্যবস্থা ; তার পরে যোলোই তারিখে জাহাজে চড়ে জাভায় যাত্রা ; তার পরে নতুন অধ্যায় । ইতি GARDS ১৩ আগস্ট ১৯২৭ ܬ কল্যাণীয়াসু বেীমা, মালয় উপদ্বীপের বিবরণ আমাদের দলের লোকের চিঠিপত্র থেকে নিশ্চয় পেয়েছ । ভালো করে দেখবার মতো, ভাববার মতো, লেখার মতো সময় পাইনি। কেবল ঘুরেছি। আর বকেছি। পিন্যাঙ থেকে জাহাজে চড়ে প্রথমে জাভার রাজধানী বাটাভিয়ায় এসে পৌছনো গেল । আজকাল পৃথিবীর সর্বত্রই বড়ো শহর মাত্রই দেশের শহর নয়, কালের শহর । সবাই আধুনিক । সবাই মুখের চেহারায় একই, কেবল বেশভূষায় কিছু তফাত । অর্থাৎ, কারও-বা পাগড়িটা ঝকঝকে কিন্তু জামায় বোতাম নেই, ধুতিখানা হাঁটু পর্যন্ত, ছেড়া চাদরখানায় ধোপ পড়ে না, যেমন কলকাতা ; কারও—বা আগাগোড়াই ফিটফাট ধোয়া-মাজা ; উজ্জ্বল বসনভূষণ, যেমন বাটাভিয়া । শহরগুলোর মুখের চেহারা একই বলেছি, কথাটা ঠিক নয় । মুখ দেখা যায় না, মুখোশ দেখি । সেই মুখোশগুলো এক কারখানায় একই ছাচে ঢালাই করা । কেউ-বা। সেই মুখোশ পরিষ্কার পালিশ করে রাখে, কারও বা হেলায়-ফেলায় মলিন । কলকাতা আর বাটাভিয়া উভয়েই এক আধুনিক কালের কন্যা ; কেবল জামাতারা স্বতন্ত্র, তাই আদরযত্বে অনেক তফাত । শ্ৰীমতী বাটাভিয়ার সিঁথি থেকে চরণচক্ৰ পৰ্যন্ত গয়নার অভাব নেই । তার উপরে সাবান দিয়ে গা মাজা-ঘাষা ও অঙ্গলেপ দিয়ে ঔজ্জ্বল্যসাধন চলছেই । কলকাতার হাতে নোয়া আছে, কিন্তু বাজুবন্দ দেখি নে । তার পরে যে-জলে তার স্নান সে-জলও যেমন, আর যে-গামছায় গা-মোছা তারও সেই দশা । আমরা চিৎপুরবিভাগের পুরবাসী, বাটাভিয়ায় এসে মনে হয় কৃষ্ণপক্ষ থেকে শুক্লপক্ষে এলুম। হােটেলের খাচায় ছিলেম দিন-তিনেক ; অভ্যর্থনার ক্রটি হয় নি। সমস্ত বিবরণ বোধ হয় সুনীতি কোনো-একসময়ে লিখবেন । কেননা, সুনীতির যেমন দর্শনশক্তি তেমনি ধারণাশক্তি ।। যত বড়ো তার আগ্রহ তত বড়েই তার সংগ্ৰহ । যা-কিছু তার চোখে পড়ে সমান্তই তার মনে জমা হয় । কণামাত্র নষ্ট হয় না । নষ্ট-যে হয় না। সে দু দিক থেকেই, রক্ষণে এবং দানে । তন্নষ্টং যন্নদীয়তে । বুঝতে পারছি, তার হাতে আমাদের ভ্ৰমণের ইতিবৃত্ত লেশমাত্র ব্যর্থ হবে না, লুপ্ত হবে না । বাটাভিয়া থেকে জাহাজে করে বালিদ্বীপের দিকে রওনা হলুম। ঘন্টা-কয়েকের জন্যে সুরবায়া শহরে আমাদের নামিয়ে নিলে। এও একটা আধুনিক শহর ; জাভার আঙ্গিক নয়, জাভার আনুষঙ্গিক । আলাদিনের প্রদীপের মন্মে। শহরটাকে নিউজীলন্ডে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলেও খাপছাড়া হয় না । পার হয়ে এলেম বালিমীপে ; দেখলেম ধরণীর চিরযৌবনা মূর্তি। এখানে প্রাচীন শতাব্দী নবীন হয়ে আছে । এখানে মাটির উপর অন্নপূর্ণর পাদপীঠ শ্যামল আন্তরণে দিগন্ত থেকে দিগন্তে বিস্তীৰ্ণ ; প্ৰজা আললিত লােকালয়গুলিতে সকেল অবকাশ। সেই অবকাশ উৎসবে অনুষ্ঠানে নিতাই এই স্বীপটুিকুতে রেলগাড়ি নেই। রেলগাড়ি আধুনিক কালের বাহন । আধুনিক কালটি অত্যন্ত কৃপণ কাল, কোনো দিকে একটুমাত্র বাহুল্যের বরাদ্দ রাখতে চায় না। এই কালের মানুষ বলে : Time is money । তাই কালের বাজেয়ািরচ বন্ধ করবার জন্যে রেলের এজিন ইফাতে ইফাতে, ধোয়া ওগরাতে ওগরাতে, মেদিনী কম্পমান করে দেশদেশান্তরে দুটােছুটি করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু, এই বালিমীপে বর্তমান