পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(SO রবীন্দ্র-রচনাবলী হার মানলুম।” সে দীনভাবে বলছে, “এই অতীতকে প্রকাশ করে রাখাই আমার কাজ, নিজেকে লুপ্ত করে দিয়ে।” নিজের পরে বিশ্বাস করবার সাহস নেই। এই হচ্ছে নিজের শক্তি সম্বন্ধে বৈরাগ্য, নিজের পরে দাবি যতদূর সম্ভব কমিয়ে দেওয়া । দাবি স্বীকার করায় দুঃখ আছে, বিপদ আছে, অতএব— বৈরাগ্যমেবাভিয়াম, অর্থাৎ বৈনাশ্যমেবাভয়ম । সেদিন বাংলিতে আমরা যে অনুষ্ঠান দেখেছি সেটা প্ৰেতাত্মার স্বৰ্গারোহণ পর্ব। মৃত্যু হয়েছে বহু পূর্বে ; এতদিনে আত্মা দেবসভায় স্থান পেয়েছে বলে এই বিশেষ উৎসব । সুখবতী-নামক জেলায় উবুদ-নামক শহরে হবে দাহ ক্রিয়া, আগামী পােচই সেপ্টেম্বর । ব্যাপারটার মধ্যে আরো অনেক বেশি সমারোহ থাকবে- কিন্তু তবু সেই মাদ্রাজি চেটির পয়ত্ৰিশ লক্ষ টাকার মন্দির। এ বহু বহু শতাব্দীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, সেই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াই চলেছে, এর আর অন্ত নেই । এখানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় এত অসম্ভবরকম ব্যয় হয় যে সুদীর্ঘকাল লাগে তার আয়োজনে- যম আপন কাজ সংক্ষেপে ও সস্তায় সারেন। কিন্তু নিয়ম চলে অতি লম্বা ও দুর্মুল্য চালে । এখানে অতীত কালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলেছে বহুকাল ধরে, বর্তমানকালকে আপনি সর্বস্ব দিতে হচ্ছে তার ব্যয় বহন করবার জন্যে । এখানে এসে বার বার আমার এই কথা মনে হয়েছে যে, অতীতকাল যত বড়ো কালই হােক, নিজের সম্বন্ধে বর্তমানকালের একটা স্পর্ধা থাকা উচিত ; মনে থাকা উচিত, তার মধ্যে জয় করবার শক্তি আছে । এইভাবটাকে আমি একটি ছোটাে কবিতায় লিখেছি, সেটা এইখানে তুলে দিয়ে এই দীর্ঘ পত্ৰ শেষ করি । নন্দগোপাল বুক ফুলিয়ে এসে বললে আমায় হোসে, “আমার সঙ্গে লড়াই করে কখখনো কি পার । বারে বারেই হার ।” আমি বললেম, “তই বৈকি ! মিথ্যে তোমার বড়াই, হােক দেখি তো লড়াই।” “আচ্ছা, তবে দেখাই তোমায়” এই বলে সে যেমনি টানলে হাত দাদামশায় তখখনি চিৎপাত । সবাইকে সে আনলে ডেকে, চেচিয়ে নন্দ করলে বাড়ি মাত । বারে বারে শুধায় আমায়, “বলো তোমার হার হয়েছে না কি ?” আমি কইলেম, “বলতে হবে তা কি । ধুলোর যখন নিলেম শরণ প্রমাণ তখন রইল কি আর বাকি । এই কথা কি জানআমার কাছে, নন্দগোপাল, যখনই হার মান, লজা সে আমার । তোমারই শেষ জিত ।” ইতি ৩০শে আগস্ট ১৯২৭ কারেম আসন । বালি* ১ প্ৰতিমা দেবীকে লিখিত ।