পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রী 8\ ভোজপুরিয়াদের খচুমাচু বাদ্যের দুঃসহ অত্যাচার নয়। এদের নাচ, যেমন সুন্দর সজ্জিত অঙ্গের নােচ, এদের সংগীতে যে ছন্দের নাচ সেও খোল করতাল মৃদঙ্গের কোলাহল নয়- সুশ্রাব্য সুর দিয়ে সেই নাচ মণ্ডিত । এদের সংগীতকে বলা যেতে পারে ‘স্বরানুত্য, এদের অভিনয়কে বলা যায়। র্যাপনাট্য । ভারতবর্ষ থেকে নটরাজ এসে একদিন এখানে মন্দিরে পূজা পেয়েছিলেন, তিনি এদের যে-বর দিয়েছেন সে হচ্ছে র্তার নাচটি- আর, আমাদের জন্যে কি কেবল র্তার শ্মশানভীস্মই রইল। ইতি so Q?CPGs »assRʻqʼ Str (დglüრfi বাণুঙ । যবন্ধীপ কল্যাণীয়াসু বীেমা, আমরা একটি সুন্দর জায়গায় এসেছি। পাহাড়ের উপরে- শোনা গেল পাচ হাজার ফুট উচু। হাওয়াটা বেশ ঠাণ্ডা। কিন্তু, হিমালয়ের এতটা উচু কোনো পাহাড়ে যতটা শীত এখানে তার কাছ দিয়েও যায় না। আমরা আছি ভীমনট বলে এক ভদ্রলোকের আতিথ্যে । এঁর স্ত্রী অষ্ট্রীয়, ভিয়েনার মেয়ে । বাগান দিয়ে বেষ্টিত সুন্দর বাড়িটি পাহাড়ের উপর । এখান থেকে ঠিক সামনেই দেখতে পাই নীল গিরিমণ্ডলীর কোলে বাণ্ডুঙ শহর । পাহাড়ের যে অঞ্জলির মধ্যে এই শহর, অনতিকাল আগে সেখানে সরোবর ছিল । কখন একসময় পাড়ি ধসে গিয়ে তার সমস্ত জল বেরিয়ে চলে গেছে । এতদিন ঘোরাঘুরির পরে এই সুন্দর নির্জন জায়গায় নিভৃত বাড়িতে এসে বড়ো আরাম বোধ হচ্ছে । জাভাতে নামার পর থেকেই যিনি সমস্তক্ষণ অশ্রান্ত যত্নে আমাদের সাহচর্য করে আসছেন তার নাম সামুয়েল কোপেরবরগ। নামের মূল অর্থ হচ্ছে তামার পাহাড় । সুনীতি সেই মানেটা নিয়ে তার নামের সংস্কৃত অনুবাদ করে দিয়েছেন তাম্রচুড় । আমাদের মহলে তার এই নামটিই চলে গিয়েছে, তিনি এতে আনন্দিত। লোকটির নাম বদলে তাকে স্বর্ণচূড় বলতে ইচ্ছে করে । কিসে আমাদের লেশমাত্র আরাম সুবিধা বা দাবি পূর্ণ হতে পারে সেজন্যে তিনি অসাধারণ চিন্তা ও পরিশ্রম করেছেন। অকৃত্রিম সৌহার্দ্য র্তার। দৈহিক পরিমাণে মানুষটি সংকীর্ণ, কিন্তু হৃদয়ের পরিমাণে খুব প্রশস্ত। এতকাল আমরা তাকে নানা সময়ে নানা উপলক্ষে দিনরাত ধরে দেখেছি- কখনো তার মধ্যে ঔদ্ধত্য বা ক্ষুদ্রতা বা অহমিকা দেখি নি। সব সময়েই দেখেছি, নিজেকে তিনি সকলের শেষে রেখেছেন । তার শরীর রুগণ ও দুর্বল, অথচ সেই রুগণ শরীরের জন্যে কোনোদিন কোনো বিশেষ সুবিধা দাবি করেন নি। সকলের সব হয়ে গিয়ে যেটুকু উদ্যবৃত্ত সেইটুকুতেই তার অধিকার । অনেকের কাছে তিনি তর্জন সহ্য করেছেন। কিন্তু তা নিয়ে কোনোদিন তঁর কাছ থেকে নালিশ বা কারও নিন্দে শুনি নি। ইংরেজি ভালো বলতে পারেন না, বুঝতেও বাধে । কিন্তু, কথায় যা না কুলোয় কাজে তার চতুৰ্ভণি পুষিয়ে দেন। কোথাও যাতায়াতের সময় মোটরগাড়িতে প্ৰথম প্ৰথম তিনি আমাদের সঙ্গ নিতেন, কিন্তু যেই দেখলেন, তার সঙ্গে আলাপ স্থান করে দিলেন । কিন্তু, এখন এমন হয়েছে, তিনি সঙ্গে না থাকলে কেবল যে অসুবিধা হয় তা নয়, আমার তো ভালোই লাগে না। আমাদের মানসম্মান-সুখ-স্বচ্ছন্দতার চিন্তায় তিনি নিজেকে এমন সম্পূৰ্ণ ঢেলে দিয়েছেন যে, তিনি একটু সরে গেলেই আমাদের বড়ো বেশি বঁফাক পড়ে। তার জিন্তু হৃদয়ের একটি লক্ষণ দেখে আমার ভারি ভালো লাগে- সর্বত্রই দেখি, শিশুদের তিনি বন্ধু। তারা ঔকে নিজেদের সমবয়সী বলেই জানে। তার হৃদয়ের আর-একটি প্রমাণ, জাভার লোকদের তিনি ১ নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লিখিত ।