পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GłGłbr রবীন্দ্র-রচনাবলী বিলিতি বাবুগিরির চলন শুরু করে দিলে । তখন থেকে আসবাবের মাপেই ভদ্রতার পরিমাপ আর হয়েছে। তাই আমাদের দেশেও আজকাল কুলশীল রীতিনীতি বুদ্ধিবিদ্যা সমস্ত ছাপিয়ে চোখে পা ধনের বিশিষ্টতা । এই বিশিষ্টতার গৌরবই মানুষের পক্ষে সব চেয়ে আগৌরব । এরই ইত্যরত যা মজার মধ্যে প্ৰবেশ না করে সেজন্যে বিশেষ সাবধান হওয়া উচিত । এখানে এসে সব চেয়ে যেটা আমার চোখে ভালো লেগেছে সে হচ্ছে, এই ধনগরিমার ইত্যরত সম্পূর্ণ তিরোভাব । কেবলমাত্র এই কারণেই এ দেশে জনসাধারণের আত্মমর্যাদা এক মুহুর্তে অবারি হয়েছে। চাষাভুষো সকলেই আজ অসম্মানের বোঝা ঝেড়ে ফেলে মাথা তুলে দাড়াতে পেরে এইটে দেখে আমি যেমন বিস্মিত তেমনি আনন্দিত হয়েছি। মানুষে মানুষে ব্যবহার কী আশ্চর্য সহ হয়ে গেছে। অনেক কথা বলবার আছে, বলবার চেষ্টা করব ; কিন্তু এই মুহুর্তে আপাতত বিশ্র করবার দরকার হয়েছে। অতএব জানলার সামনে লম্বা কেদারার উপর হেলান দিয়ে বসব, পারে উপর একটা কম্বল টেনে দেব- তার পরে চোখ যদি বুজে আসতে চায় জোর করে টেনে রাখা চেষ্টা করব না । ইতি ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩০ N বহুকাল গত হল তোমাদের উভয়কে পত্র লিখেছিলুম। তোমাদের সম্মিলিত নৈঃশব্দ থে অনুমান করি সেই যুগলপত্র কৈবল্য লাভ করেছে। এমনতরো মহতী বিনষ্টি ভারতীয় ডাকঘ আজকাল মাঝে মাঝে ঘটছে বলে শঙ্কা করি । এই কারণেই আজকাল চিঠি লিখতে উৎসাহ বোধ বা নে । অন্তত তোমাদের দিক থেকে সাড়া না পেলে চুপ করে যাই । নিঃশব্দ রাত্রির প্রহরগুলোকে দী বলে মনে হয় ; তেমনিতরোই নিশ্চিঠি কাল কল্পনায় অত্যন্ত লম্বা হয়ে ওঠে । তাই থেকে থেকে ম হয় যেন লোকান্তরপ্রাপ্তি হয়েছে । তাই পাজি গেছে বদল হয়ে, ঘড়ি বাজছে লম্বা তালে । দ্ৰৌপদী যেদিন ফিরব সেদিন নিশ্চিতই ফিরব- আজকের দিন যেমন অব্যবহিত নিকটে সেদিনও তেমfি নিকটে আসবে, এই মনে করে সাত্মনার চেষ্টা করি । তা হােক, আপাতত রাশিয়ায় এসেছি- না এলে এ জন্মের তীর্থদর্শন অত্যন্ত অসমাপ্ত থাকত এখানে এরা যা কাণ্ড করছে তার ভালোমন্দ বিচার করবার পূর্বে সর্বপ্রথমেই মনে হয়, কী অস সাহস । সনাতন বলে পদার্থটা মানুষের অস্থিমজ্জায় মনে-প্ৰাণে হাজারখানা হয়ে আঁকড়ে আছে ; ত কত দিকে কত মহল, কত দরজায় কত পাহারা, কত যুগ থেকে কত ট্যাকসো আদায় করে ত তহবিল হয়ে উঠেছে পর্বতপ্ৰমাণ । এরা তাকে একেবারে জটে ধরে টান মেরেছে ; ভয় ভাবনা সং কিছু মনে নেই। সনাতনের গদি দিয়েছে। বঁটিয়ে, নূতনের জন্যে একেবারে নূতন আসন বানি দিলে । পশ্চিম মহাদেশ বিজ্ঞানের জাদুবলে দুঃসাধ্য সাধন করে, দেখে মনে মনে তারিফ করি । বি এখানে যে প্ৰকাণ্ড ব্যাপার চলছে সেটা দেখে আমি সব চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছি । শুধু যদি এব ভীষণ ভাঙচুরের কাণ্ড হত তাতে তেমন আশ্চর্য হতুম না- কেননা নাস্তানাবুদ করবার শক্তি এ.ে যথেষ্ট আছে- কিন্তু দেখতে পাচ্ছি, বহুদূরব্যাপী একটা ক্ষেত্র নিয়ে এরা একটা নূতন জগৎ গ তুলতে কোমর বেঁধে লেগে গেছে। দেরি সইছে না ; কেননা জগৎ জুড়ে এদের প্রতিকূলতা, সব এদের বিরোধী- যত শীঘ্ৰ পারে এদের খাড়া হয়ে দাড়াতে হবে- হাতে হাতে প্ৰমাণ করে দি হবে, এরা যেটা চাচ্ছে সেটা ভুল নয়, ফাকি নয় । হাজার বছরের বিরুদ্ধে। দশ-পনেরো বছর জিত বলে পণ করেছে। অন্য দেশের তুলনায় এদের অর্থের জোর অতি সামান্য, প্ৰতিজ্ঞার জোর দুর্ধর্ষ।