পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি ○ と Q দিলে যে কী করে, সে কথা এই হতভাগ্য ভারতবাসীকে যেমন একান্ত বিস্মিত করেছে এমন আর কাকে করবে বলে । অথচ যে সময়ের মধ্যে এই পরিবর্তন চলছিল, সে সময়ে এ দেশে আমাদের দেশের বহুপ্ৰশংসিত “ল অ্যান্ড অর্ডার’ ছিল না । তোমাকে পূর্বেই বলেছি, এদের জনসাধারণের শিক্ষার চেহারা দেখবার জন্যে আমাকে দূরে যেতে হয় নি, কিংবা স্কুলের ইনসাপেক্টরের মতো এদের বানান তদন্ত করবার সময় দেখতে হয় নি। ‘কান'এ “সোনায় এরা মূর্ধন্য ণ লাগায় কি না । একদিন সন্ধ্যাবেলা মস্কেী শহরে একটা বাড়িতে গিয়েছিলুম, সেটা চাষীদের বাসা, গ্রাম থেকে কোনো উপলক্ষে যখন তারা শহরে আসে তখন সস্তায় ঐ বাড়িতে কিছু দিনের মতো থাকতে পায় । তাদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়েছিল । সে-রকম কথাবার্তা যখন আমাদের দেশের চাষীদের সঙ্গে হবে সেইদিন সাইমন কমিশনের জবাব দিতে পারব । আর কিছু নয়, এটা স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি, সবই হতে পারত। কিন্তু হয় নি- না হােক, আমরা পেয়েছি “ল অ্যান্ড অর্ডার । আমাদের ওখানে সাম্প্রদায়িক লড়াই ঘটে বলে একটা অখ্যাতি বিশেষ ঝোক দিয়ে রটনা হয়ে থাকে- এখানেও য়িহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লড়াই আমাদের দেশেরই আধুনিক উপসর্গের মতো অতিকুৎসিত অতিবর্বর ভাবেই ঘটত— শিক্ষায় এবং শাসনে একেবারে তার মূল উৎপাটিত হয়েছে। কতবার আমি ভেবেছি, আমাদের দেশে সাইমন কমিশন যাবার আগে একবার রাশিয়ায় তার ঘুরে যাওয়া উচিত ছিল । -- তোমার মতো ভদ্রমহিলাকে সাধারণ ভদ্রগোছের চিঠি না লিখে এরকম চিঠি যে কেন লিখলুম তার কারণ চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে, দেশের দশা আমার মনের মধ্যে কিরকম তোলপাড় করছে । জালিয়ানওয়ালাবাগের উপদ্রবের পর একবার আমার মনে এইরকম অশান্তি জেগেছিল । এবার ঢাকার উপদ্রবের পর আবার সেইরকম দুঃখ পাচ্ছি। সে ঘটনার উপর সরকারী চুনকামের কাজ হয়েছে, কিন্তু এরকম সরকারী চুনকামের যে কী মূল্য তা রাষ্ট্রনীতিবিৎ সবাই জানে । এইরকম ঘটনা যদি সোভিয়েট রাশিয়ায় ঘটত তা হলে কোনো চুনকামেই তার কলঙ্ক ঢাকা পড়ত না । সুধীন্দ্র, আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় আন্দোলনে যার কোনো শ্রদ্ধা কোনোদিন ছিল না, সেও এবারে আমাকে এমন চিঠি লিখেছে যাতে বোঝা যাচ্ছে সরকারী ধর্মনীতির প্রতি ধিককার আজ আমাদের দেশে কতদূর পর্যন্ত পৌচেছে । যা হােক, তোমার চিঠি অসমাপ্ত রইল- কাগজ এবং সময় ফুরিয়ে এসেছে, পরের চিঠিতে এ চিঠির অসম্পূর্ণ অংশ সম্পূৰ্ণ করব । ইতি ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩০ বলিন মস্কো থেকে তোমাকে একটা বড়ো চিঠিতে রাশিয়া সম্বন্ধে আমার ধারণা লিখেছিলুম । সে চিঠি যদি পাও তো রাশিয়া সম্বন্ধে কিছু খবর পাবে । এখানে চাষীদের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য কতটা কাজ করা হচ্ছে তারই বিবরণ কিছু দিয়েছি। আমাদের দেশে যে শ্রেণীর লোক মূক মূঢ়, জীবনের সকল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে যাদের মন অন্তর-বাহিরের দৈন্যের তলায় চাপা পড়ে গেছে, এখানে সেই শ্রেণীর লোকের সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হল তখন বুঝতে পারলুম, সমাজের অনাদরে মানুষের চিত্তসম্পদ কত প্ৰভূতপরিমাণে অবলুপ্ত হয়ে থাকে- কী অসীম তার অপব্যয়, কী নিষ্ঠুর তার অবিচার । মস্কেীতে একটি কৃষিভবন দেখতে গিয়েছিলুম ; এটা ওদের ক্লাবের মতো । রাশিয়ার সমস্ত ছােটােবড়ো শহরে এবং গ্রামে এরকম আবাস ছড়ানো আছে। এ-সব জায়গায় কৃষিবিদ্যা সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি সম্বন্ধে উপদেশ দেবার ব্যবস্থা আছে ; যারা নিরক্ষার তাদের পড়াশুনো শেখানোর উপায় করেছে ; এখানে বিশেষ বিশেষ ক্লাসে বৈজ্ঞানিক রীতিতে চাষ করার ব্যবস্থা কৃষাণদের বুঝিয়ে দেওয়া