পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী " ويوم 6) হয় । এইরকম প্ৰত্যেক বাড়িতে প্ৰাকৃতিক সামাজিক সকলপ্রকার শিক্ষণীয় বিষয়ে মজিয়াম, তা ছাড়া চাষীদের সকলপ্রকার প্রয়োজনের উপযোগী পরামর্শ দেবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। চাষীরা কোনো উপলক্ষে গ্রাম থেকে যখন শহরে আসে তখন খুব কম খরচে অন্তত তিন সপ্তাহ এইরকম বাড়িতে থাকতে পারে । এই বহুব্যাপক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সোভিয়েট গবমেন্ট এককালে নিরক্ষার চাষীদের চিত্তকে উদবোধিত করে সমাজব্যাপী নবজীবন প্ৰতিষ্ঠার প্রশস্ততম ভিত্তি স্থাপন করেছে । বাড়িতে ঢুকে দেখি, খাবার ঘরে কেউ কেউ বসে খাচ্ছে, পড়বার ঘরে এক দল খবরের কাগজ পড়তে প্ৰবৃত্ত । উপরে একটা বড়ো ঘরে আমি এসে বসলুম ; সেখানে সবাই এসে জমা হল । তারা নানা স্থানের লোক, কেউ বা অনেক দূর প্রদেশ থেকে এসেছে। বেশ সহজ ওদের ভাবগতিক, কোনোরকম সংকোচ নেই। প্ৰথম অভ্যর্থনা ও পরিচয় উপলক্ষে বাড়ির পরিদর্শক কিছু বললে, আমিও কিছু বললুম। তার পরে, ওরা আমাকে প্রশ্ন করতে আরম্ভ করলে । , প্রথমেই ওদের মধ্যে একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া ठूश ८कन्म । উত্তর দিলুম, “যখন আমার বয়স অল্প ছিল কখনো এরকম বর্বরতা দেখি নি । তখন গ্রামে ও শহরে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যের অভাব ছিল না । পরস্পরের ক্রিয়াকাণ্ডে পরস্পরের যোগ ছিল, জীবনযাত্রার সুখে দুঃখে তারা ছিল এক । এ-সব কুৎসিত কাণ্ড দেখতে পাচ্ছি। যখন থেকে আমাদের দেশে রাষ্ট্ৰীয় আন্দোলন শুরু হয়েছে। কিন্তু প্ৰতিবেশীদের মধ্যে এইরকম অমানুষিক দুর্ব্যবহারের আশু কারণ যাই হােক, এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের জনসাধারণের মধ্যে অশিক্ষা । যে পরিমাণ শিক্ষার দ্বারা এইরকম দুবুদ্ধি দূর হয় আমাদের দেশে বিস্তৃত ভাবে তার প্রচলন করা আজ পর্যন্ত হয় নি। যা তোমাদের দেশে দেখলুম তাতে আমি বিস্মিত হয়েছি।” প্রশ্ন । তুমি তো লেখক, তোমাদের চাষীদের কথা কি কিছু লিখেছি। ভবিষ্যতে তাদের কী গতি হবে । উত্তর । শুধু লেখা কেন, তাদের জন্য আমি কাজ ফেদেছি । আমার একলার সাধ্যে যতটুকু সম্ভব তাই দিয়ে তাদের শিক্ষার কাজ চালাই, পল্লীর উন্নতিসাধনে তাদের সাহায্য করি । কিন্তু তোমাদের এখানে যে প্ৰকাণ্ড শিক্ষাব্যাপার যে আশ্চর্য অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে তার তুলনায় আমার এ উদ্যোগ অতি যৎসামান্য । প্রশ্ন । আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রের একত্রীকরণের যে চেষ্টা চলছে সে সম্বন্ধে তোমার মত কী । উত্তর । মত দেবার মতো আমার অভিজ্ঞতা হয় নি, তোমাদেরই কাছ থেকে শুনতে চাই । আমার জানবার কথা এই যে, এতে তোমাদের ইচ্ছার উপর জবরদস্তি করা হচ্ছে কি না । প্রশ্ন । ভারতবর্ষে সবাই কি এই ঐকত্রিকতা এবং সাধারণভাবে এখানকার অন্য সমস্ত উদ্যোগের কথা কিছু জানে না । উত্তর । জানিবার মতো শিক্ষা অতি অল্প লোকেরই আছে । তা ছাড়া তোমাদের খবর নানা কারণে চাপা পড়ে যায় । এবং যা-কিছু শোনা যায় তাও সব বিশ্বাসযোগ্য নয় । প্রশ্ন। আমাদের দেশে এই যে চাষীদের জন্যে আবাস-ব্যবস্থা হয়েছে, এর অস্তিত্বও কি তুমি আগে ୪୩୩Ov୬ ୪୩ । উত্তর । তোমাদের কল্যাণের জন্যে কী করা হচ্ছে মস্কেীয়ে এসে তা প্ৰথম দেখলুম এবং জানলুম। যাই হােক, এবার আমার প্রশ্নের উত্তর তোমরা দাও । চাষী প্ৰজার পক্ষে এই ঐকত্রিকতার ফলাফল সম্বন্ধে তোমাদের মত কী, তোমাদের ইচ্ছা কী । ) একজন যুবক চাবী য়ুক্রেন প্রদেশ থেকে এসেছে, সে বললে, “দু বছর হল একটি ঐকত্রিক কৃষিক্ষেত্র স্থাপিত হয়েছে, আমি তাতে কাজ করি । এই ক্ষেত্রের মধ্যে ফল-ফসলের বাগান আছে, তার