পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাশিয়ার চিঠি Gav একটি ছেলে বললে, “প্ৰথমে আমরা বই থেকে, আমাদের শিক্ষকের কাছ থেকে শিখি, তার পরে তাই নিয়ে আমরা পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করি, তার পরে সেইগুলি সাধারণকে জানাবার জন্যে যাবার হুকুম হয় ।” সজীব সংবাদপত্র অভিনয় করে আমাকে দেখালে । বিষয়টা হচ্ছে এদের পাঞ্চবার্ষিক সংকল্প । ব্যাপারটা হচ্ছে, এরা কঠিন পণ করেছে। পাচ বছরের মধ্যে সমস্ত দেশকে যন্ত্রশক্তিতে সুদক্ষ করে তুলবে, বিদ্যুৎশক্তি বাস্পশক্তিকে দেশের এক ধার থেকে আর-এক ধার পর্যন্ত কাজে লাগিয়ে দেবে। এদের দেশ বলতে কেবল যুরোপীয় রাশিয়া বোঝায় না । এশিয়ার অনেক দূর পর্যন্ত তার বিস্তার । সেখানেও নিয়ে যাবে। এদের শক্তির বাহনকে । ধনীকে ধনীতর করবার জন্যে নয়, জনসমষ্টিকে শক্তিসম্পন্ন করবার জন্যে- সেই জনসমষ্টির মধ্যে মধ্য-এশিয়ার অসিতচম মানুষও আছে । তারাও শক্তির অধিকারী হবে বলে ভয় নেই, ভাবনা নেই । এই কাজের জন্য এদের প্রভূত টাকার দরকার- যুরোপীয় বড়োবাজারে এদের হুন্ডি চলে না, নগদ দামে কেনা ছাড়া উপায় নেই। তাই পেটের অন্ন দিয়ে এরা জিনিস কিনছে, উৎপন্ন শস্য পশুমাংস ডিম মাখন সমস্ত চালান হচ্ছে বিদেশের হাটে । সমস্ত দেশের লোক উপবাসের প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এখনো দেড় বছর বাকি । অন্য দেশের মহাজনরা খুশি নয় । বিদেশী এঞ্জিনিয়াররা এদের কল-কারখানা অনেক নষ্টও করেছে। ব্যাপারটা বৃহৎ ও জটিল, সময় অত্যন্ত অল্প । সময় বাড়াতে সাহস হয় না, কেননা সমস্ত ধনী-জগতের প্রতিকূলতার মুখে এরা দাড়িয়ে, যত শীঘ্র সম্ভব আপন শক্তিতে ধন উৎপাদন এদের পক্ষে নিতান্ত দরকার । তিন বছর কষ্টে কেটে গেছে, এখনো দু বছর বাকি । "সজীব খবরের কাগজটিা অভিনয়ের মতো ; নেচে গেয়ে পতাকা তুলে এরা জানিয়ে দিতে চায় দেশের অর্থশক্তিকে যন্ত্রবাহিনী করে ক্রমে ক্ৰমে কী পরিমাণে এরা সফলতা লাভ করছে । দেখবার প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি । যারা জীবনযাত্রার অত্যন্ত প্ৰয়োজনীয় সামগ্ৰী থেকে বঞ্চিত হয়ে বহু কষ্টে কাল কাটাচ্ছে তাদের বোঝানো চাই অনতিকালের মধ্যে এই কষ্টের অবসান হবে এবং বদলে যা পাবে তার কথা স্মরণ করে যেন তারা আনন্দের সঙ্গে, গৌরবের সঙ্গে, কষ্টকে বরণ করে নেয় । এর মধ্যে সাস্তুনার কথাটা এই যে, কোনো এক-দল লোক নয়, দেশের সকল লোকই একসঙ্গে তপস্যায় প্রবৃত্ত । এই “সজীব সংবাদপত্র অন্য দেশের বিবরণও এইরকম করে প্রচার করে । মনে পড়ল পতিসরে দেহতত্ত্ব মুক্তিতত্ত্ব নিয়ে এক যাত্রার পালা শুনেছিলুম— প্ৰণালীটাি একই, লক্ষ্যটা আলাদা । মনে করছি দেশে ফিরে গিয়ে শান্তিনিকেতন সুরুলে "সজীব সংবাদপত্র’ চালাবার চেষ্টা করব । ওদের দৈনিক কার্যপদ্ধতি হচ্ছে এইরকম- সকাল সাতটার সময় ওরা বিছানা থেকে ওঠে । তার পর পনেরো মিনিট ব্যায়াম, প্ৰাতঃকৃত্য, প্রাতরাশ । আটটার সময় ক্লাস বসে । একটার সময় কিছুক্ষণের জন্য আহার ও বিশ্রাম । বেলা তিনটে পর্যন্ত ক্লাস চলে । শেখাবার বিষয় হচ্ছে ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, প্রাথমিক প্রাকৃতবিজ্ঞান, প্রাথমিক রসায়ন, প্রাথমিক জীববিজ্ঞান, যন্ত্রবিজ্ঞান, : রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য, হাতের কাজ, ছুতোরের কাজ, বই-বাধাই, হাল আমলের চাষের যন্ত্র প্রভৃতির ব্যবহার ইত্যাদি । রবিবার নেই। প্ৰত্যেক পঞ্চম দিনে ছুটি । তিনটের পরে বিশেষ দিনের राश | পল্লীগ্রামে ভ্ৰমণ করতে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । মাঝে মাঝে নিজেরা অভিনয় করে ; মাঝে মাঝে থিয়েটার দেখতে, সিনেমা দেখতে যায় । সন্ধ্যাবেলায় গল্প পড়া, গল্প বলা, তর্কসভা, সাহিত্যিক ও বৈজ্ঞানিক সভা। ছুটির দিনে পায়োনিয়ররা কিছু পরিমাণে নিজেদের কাপড় কাচে, ঘর পরিষ্কার করে, বাড়ি এবং বাডির চার দিক পরিষ্কার করে, ক্লাস-পাঠ্যের অতিরিক্ত পড়া পড়ে, বেড়াতে যায় । ভরতি