পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GS 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী জানে। নিজেদের উপর ধিককার দেবার কারণ চাপা থাকে । এ কথাও সত্য, ভারতের নিমক দীর্ঘকাল যে খেয়েছে তার ইংরেজি যকৃৎ এবং হৃদয় কলুষিত হয়ে গেছে, অথচ আমাদের ভাগ্যক্রমে তারাই হল অথরিটি । ভারতবর্ষে বর্তমান বিপ্লব উপলক্ষে দণ্ডচালনা সম্বন্ধে কর্তৃপক্ষ বলেছেন যে, তার পীড়ন ছিল ন্যূনতম মাত্রায় । এ কথা মেনে নিতে আমরা অনিচ্ছক, কিন্তু অতীত ও বর্তমানের প্রচলিত শাসনািনীতির সঙ্গে তুলনা করে দেখলে কথাটাকে অত্যক্তি বলতে পারব না। মার খেয়েছি, অন্যায় মারও যথেষ্ট খেয়েছি ; এবং সব চেয়ে কলঙ্কের কথা গুপ্ত মার, তারও অভাব ছিল না । এ কথাও বলব, অনেক স্থলেই যারা মার খেয়েছে মাহাত্ম্য তাদেরই, যারা মেরেছে তারা আপন মান খুইয়েছে । কিন্তু সাধারণ রাষ্ট্রশাসন নীতির আদর্শে আমাদের মারের মাত্রা ন্যূনতম বৈকি। বিশেষত আমাদের *পরে ওদের নাভীর টান নেই, তা ছাড়া সমস্ত ভারতবর্ষকে জালিয়ানওআলাবাগ করে তোলা এদের পক্ষে বাহুবলের দিক থেকে অসম্ভব ছিল না । আমেরিকার সমগ্ৰ নিগ্ৰেজাতি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে নিজেদের যোগ বিচ্ছিন্ন করবার জন্যে যদি স্পর্ধাপূর্বক অধ্যবসায়ে প্ৰবৃত্ত হত তা হলে কিরকম বীভৎসভাবে রক্তপ্লাবন ঘটিত, বর্তমান শান্তির অবস্থাতেও তা অনুমান করে নিতে অধিক কল্পনাশক্তির প্রয়োজন হয় না । তা ছাড়া ইটালি প্রভূতি দেশে যা ঘটেছে তা নিয়ে আলোচনা করা বাহুল্য । কিন্তু এতে সাত্মনা পাই নে । যে মার লাঠির ডগায় সে মার দুদিন পরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এমন-কি, ক্ৰমে তার লজা আসাও অসম্ভব নয় । কিন্তু যে মারি অন্তরে - অন্তরে সে তো কেবল কতকগুলো মানুষের মাথা ভেঙে তার পরে খেলাঘরের ব্রিজ-পাটির অন্তরালে অন্তৰ্ধান করে না । সমস্ত জগতকে সে যে ভিতরে ভিতরে ফতুর করে দিলে । শতাব্দীর পর শতাব্দী তার তো বিরাম নেই। ক্রোধের মার থামে, লোভের মারের অন্ত পাওয়া যায় না । টাইমস’এর সাহিত্যিক ক্রোড়পত্রে দেখা গেল ম্যাকী নামক এক লেখক বলেছেন যে, ভারতে দারিদ্র্যের root cause. মূল কারণ হচ্ছে, এ দেশে নিবিচার বিবাহের ফলে অতিপ্ৰজন । কথাটার ভিতরকার ভাবটা এই যে, বাহির থেকে যে শোষণ চলছে তা দুঃসহ হত না। যদি স্বল্প অল্প নিয়ে স্বল্প লোকে হঁহাড়ি চেচে-পুছে খেতি । শুনতে পাই, ইংলন্ডে ১৮৭১ খৃস্টােব্দ থেকে ১৯২১ খৃস্টাব্দের মধ্যে শতকরা ৬৬ সংখ্যা হারে প্রজাবৃদ্ধি হয়েছে। ভারতবর্ষে পঞ্চাশ বৎসরের প্রজাবৃদ্ধির হার শতকরা ৩৩ । তবে এক যাত্রায় পৃথক কলি হল কেন । অতএব দেখা যাচ্ছে root cause প্ৰজাবৃদ্ধি নয়, root cause CRPKIGris Wer verse root GPT: দেশ যারা শাসন করছে আর যে প্ৰজারা শাসিত হচ্ছে তাদের ভাগ্য যদি এককক্ষবর্তী হয় তা হলে অন্তত অল্পের দিক থেকে নালিশের কথা থাকে না, অর্থাৎ সুভিক্ষে দুর্ভিক্ষে উভয়ের ভাগ প্রায় সমান হয়ে থাকে । কিন্তু যেখানে কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের মাঝখানে মহালোভ ও মহাসমুদ্রের ব্যবধান সেখানে অমাবস্যার তরকে বিদ্যাস্বাস্থ্যসন্মানসম্পদের কৃপণতা ঘুচিতে চায় না, অথচ নিশীথরাক্রিয় dচৗকিদারদের হাতে বৃষচক্ষু লাঠনের আয়োজন বেড়ে চলে । এ কথা হিসাব করে দেখতে স্ট্যাটিসটিকসের খুব বেশি খিটিমিটির দরকার হয় না, আজ একশো ষাট বৎসর ধরে ভারতের পক্ষে সর্ববিষয়ে দরিদ্র্য ও ব্রিটেনের পক্ষে সর্ববিষয়ে ঐশ্বৰ্য পিঠোপিঠি সংলগ্ন হয়ে আছে। এর যদি একটি সম্পূর্ণ ছবি আঁকতে চাই। তবে বাংলাদেশের যে চাৰী পাট উৎপন্ন করে আর সুদূর ভক্তিতে যারা তার মুনফগ ভোগ করে উভয়ের জীবনযাত্রার দৃশ্য পাশাপাশি দাড় করিয়ে দেখতে হয় । উভয়ের মধ্যে যোগ আছে লোভের, বিচ্ছেদ আছে ভোগের- এই বিভাগ দেড়শো বছরে বাভুল বৈ কমল না । যাত্রিক উপায়ে অর্থলাভকে যখন থেকে বহুগুণীকৃত করা সম্ভবপর হল তখন থেকে মধ্যযুগের শিভলরি অর্থাৎ বীর্যধর্ম বণিক ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। এই নিদারুশ বৈশ্যযুগের প্রথম সূচনা হল সমুদ্রযানযোগে বিশ্বসৃথিবী-আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে । বৈশ্যযুগের আদিম ভূমিকা দাসবৃত্তিতে। দাসহরণ ও ধনহরণের বীভৎসতায় ধরিত্রী সেদিন কেঁদে উঠেছিল। এই নিষ্ঠুর ব্যবসায় বিশেষভাবে চলেছিল। পরদেশে । সেদিন মেক্সিকোতে স্পেন শুধু কেবল সেখানকার সোনার সঞ্চয় নয়, সেখানকার সমগ্ৰ