পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ど○○ রবীন্দ-রচনাবলী তারাই দেখি অৰ্থতন্ত্রের দিকে শাস্ত্ৰ মেনে অচল হয়ে বসে আছে । সেই শাস্ত্রের সঙ্গে যেমন করে হােক মানুষকে টুটি চেপে কুঁটি ধরে মেলাতে চায়- এ কথাও বোঝে না, জোর করে ঠেসে-ঠসে যদি কোনো-এক রকমে মেলানো হয় তাতে সত্যের প্রমাণ হয় না ; বস্তুত যে পরিমাণেই জোর সেই পরিমাণেই সত্যেব অপ্ৰমাণ । যুরোপে যখন খৃস্টান শাস্ত্রবাক্যে জবরদস্ত বিশ্বাস ছিল তখন মানুষের হাড়গোড় ভেঙে, তাকে পুড়িয়ে বিধিয়ে, তাকে ঢ়িলিয়ে, ধর্মের সত্য-প্রমাণের চেষ্টা দেখা গিয়েছিল । আজ বলশেভিক মতবাদ সম্বন্ধে তার বন্ধু ও শত্রু উভয় পক্ষেরই সেইরকম উদ্দাম গায়ের-জোৱী যুক্তিপ্রয়োগ । দুই পক্ষেরই পরস্পরের নামে নালিশ এই যে, মানুষের মতস্বাতন্ত্র্যের অধিকারকে পীড়িত করা হচ্ছে । মাঝের থেকে পশ্চিম মহাদেশে আজ মানবপ্রকৃতি দুই তরফ থেকেই ঢেলা খেয়ে মরছে । আমার মনে পড়ছে আমাদের বাউলের গান--- ܫ নিঠুর গরজী, তুই কি মানসমকুল ভাজ বি আগুনে ? তুই ফুল ফুটাবি বাস ছুটিবি সবুর বিহুনে । দেখি- ১. { আমার পরম গুরু * { ] সে যুগযুগন্তে ফুটায় মুকুল, তাড়া ২৬. নাই । তোর লোভ প্ৰচণ্ড, তাই ভরসা দণ্ড এর আছে কোন উপায় । কয় সে মদন দিস নে বেদন, শোন নিবেদন, সেই শ্ৰীগুরুর মনে । সহজধারা আপনহারা তার বাণী শোনে রে গরজী । সোভিয়েট রাশিয়ার লোকশিক্ষা সম্বন্ধে আমার যা বক্তব্য সে আমি বলেছি, তা ছাড়া সেখানকার পলিটিকস মুনফা-লোলুপদের লোভের দ্বারা কলুষিত নয় বলে বাশিয়া রাষ্ট্রের অন্তৰ্গত নানাবিধ প্রজা জাতিবর্ণ-নির্বিশেষে সমান অধিকারের দ্বারা ও প্রকৃষ্ট শিক্ষা করি সুযোগে সম্মানিত হয়েছে, এ কথাটারও আলোচনা করেছি। আমি ব্রিটিশ-ভারতের প্রজা বলেই এই দুটি ব্যাপার আমাকে এত গভীরভাবে আনন্দ দিয়েছে । এখন বোধ করি একটি শেষ প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে । বলশেভিক অর্থনীতি সম্বন্ধে আমার মত কী, এ কথা অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন । আমার ভয় এই যে, আমরা চিরদিন শাস্ত্রশাসিত পাণ্ডাচালিত দেশ, বিদেশের আমদানি বচনকে একেবারেই বেদবাক্য বলে মেনে নেবার দিকেই আমাদের মুগ্ধ মনের ঝোক । গুরুমস্ত্রের মোহ থেকে সামলিয়ে নিয়ে আমাদের বলা দরকার যে, প্রয়োগের দ্বারাই মতের বিচার হতে পারে, এখনো পরীক্ষা শেষ হয় নি । যে-কোনো মতবাদ মানুষসম্বন্ধীয় তার প্রধান অঙ্গ হচ্ছে মানবপ্রকৃতি । এই মানবপ্রকৃতির সঙ্গে তার সামঞ্জস্য কী পরিমাণে ঘটবে তার সিদ্ধান্ত হতে সময় লাগে । তত্ত্বটাকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করবার পূর্বে অপেক্ষা করতে হবে । কিন্তু তবু সে সম্বন্ধে আলোচনা করা চলে, কেবলমাত্র লজিক নিয়ে বা অঙ্ক কয়ে নয়- মানবপ্রকৃতিকে সামনে রেখে | মানুষের মধ্যে দুটাে দিক আছে- এক দিকে সে স্বতন্ত্র, আর-এক দিকে সে সকলের সঙ্গে যুক্ত । এর একটাকে বাদ দিলে যেটা বাকি থাকে সেটা অবাস্তব । যখন কোনো একটা ঝোকে পড়ে মানুষ এক দিকেই একান্ত উধাও হয়ে যায় এবং ওজন হারিয়ে নানাপ্রকার বিপদ ঘটাতে থাকে তখন পরামর্শদাতা এসে সংকটটাকে সংক্ষেপ করতে চান ; বলেন, অন্য দিকটাকে একেবারেই ছেটে দাও । ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য যখন উৎকট স্বার্থপরতায় পৌঁছিয়ে সমাজে নানাপ্রকার উৎপাত মথিত করে তখন