পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানুষের ধর্ম وم Sچه ډ জিনিসকে একেবারে উলটিয়ে ধরাই তার ব্যাবসা । পশুরা যদি বিচারক হত্য মানুষকে বলত জন্ম-পাগল । বস্তুত মানুষের বিজ্ঞান সব মানুষকে এক-পাগলামিতে-পাওয়া জীব বলে প্ৰমাণ করছে । বলছে, সে যাকে যেরকম জানছে বলে মনে করে সেটা একেবারেই তা নয়, সম্পূর্ণই উলটো । জন্তুরা নিজেদের সম্বন্ধে এরকম লাইবেল প্রচার করে না । তাদের বোধের কাছে যেটা যা সেটা তাই, অর্থাৎ তাদের কাছে কেবল আছে তথ্য, তাদের অবিচলিত নিষ্ঠা প্ৰতীয়মানের প্রতি । তাদের জগতের আয়তন কেবল তল পৃষ্ঠ নিয়ে । তাদের সমস্ত দায় ঐ একতলাটাতেই । মানবজগতের আয়তনে বোধ আছে যা চোখে পড়ে তার গভীরে । প্ৰত্যক্ষ তথ্যকে উপেক্ষা করলে মানুষের চলে না, আবার সীতাকেও নইলে নয় । অন্যান্য বস্তুর মতোই তথ্য মানুষের সম্বল, কিন্তু সত্য তার ঐশ্বৰ্য । ঐশ্বর্যের চরম লক্ষ্য অভাব দূর করা নয়, মহিমা উপলব্ধি করানো । তাই ঐশ্বৰ্য-অভিমানী মানুষ বলেছে ভূমৈব সুখং নাৱে সুখমত্তি । বলেছে, অল্পে সুখ নেই, বহতেই সুখ । এটা নিতান্তই বেহিসাবি কথা হল । হিসাবিবুদ্ধিতে বলে, যা চাই আর যা পাই এই দুটাে মাপে মিলে গেলেই সুখের বিষয় । ইংরেজিতে একটা চলতি কথা আছে, যা যথেষ্ট সেটাই ভূরিভোজের সমান-দরের । শাস্ত্রেও বলছে, সন্তোষং পরমাস্থায় সুখার্থ সংযতো ভবেৎ। । তবেই তো দেখছি, সন্তোষে সুখ নেই আবার সন্তোষেই সুখ, এই দুটাে উলটাে কথা সামনে এসে দাড়ালো । তার কারণ, মানুষের সত্তায় দ্বৈধ আছে । তার যে সত্তা জীবসীমার মধ্যে, সেখানে যেটুকু আবশ্যক সেইটুকুতেই তাব সুখ । কিন্তু, অস্তরে অস্তরে জীবমানব বিশ্বমানবে প্রসারিত, সেই দিকে সে সুখ চায় না, সে সুখের বেশি চায়, সে ভমাকে চায় । তাই সকল জীবের মধ্যে মানুষই কেবল অমিতাচারী । তাকে পেতে হবে অমিত, তাকে দিতে হবে অমিত, কেননা তার মধ্যে আছে অমিতমানব । সেই অমিতমানব সুখের কাঙাল নয়, দুঃখভীক নয় । সেই অমিতমানব আবামের দ্বার ভেঙে কেবলই মানুষকে বের করে নিয়ে চলেছে কঠোর অধ্যাবসাযে । আমাদের ভিতবকার ছোটো মানুষটি তা নিয়ে বিদ্রুপ করে থাকে ; বলে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো । উপায় নেই । বিশ্বের মানুষটি ঘরের মানুষকে পাঠিয়ে দেন। বুনো মোষটাকে দাবিয়ে রাখতে. এমন-কি, ঘরের খ্যা এরয়া যথেষ্ট না জুটলেও । উপনিষদে ভগবান সম্বন্ধে একটি প্রশ্নোত্তর হ্রস্টাছে { স ভগবঃ কস্মিন প্রতিষ্ঠিতঃ ! সেই ভগবান কোথায় প্রতিষ্ঠিত । এই প্রশ্নের উত্তর, স্বে মহিন্নি । নিজের মহিমায় । সেই মহিমাই তার স্বভাব । সেই ठूडछाgदठ्ठी डिन्मि उठान्बन्ध्रि द्धठ ! মানুষেরও আনন্দ মহিমায় । তাই বলা হয়েছে, ভূমৈব সুখম । কিন্তু, যে স্বভাবে তার মহিমা সেই স্বভাবকে সে পায় বিরোধের ভিতর দিয়ে, পরম সুখকে পায় পরম দুঃখে । মানুষের সহজ অবস্থা ও স্বভাবের মধ্যে নিতাই দ্বন্দ্ব । তাই ধর্মের পথকে অর্থাৎ মানুষের পরম স্বভাবের পথকে- দুগং পথ্যস্তৎ কবয়ো বদন্তি । । জন্তুর অবস্থাও যেমন, স্বভাবও তার অনুগত { তার বরাদও যা, কামনাও তার পিছনে চলে বিনা বিদ্রোহে । তার যা পাওনা তার বেশি তার দাবি নেই ; মানুষ বলে বসলে, “আমি চাই উপরি-পাওনা ।” বাধা বরাদের সীমা আছে, উপরি-পাওনার সীমা নেই । মানুষের জীবিকা চলে বাধা বরাদে, উপরি-পাওনা দিয়ে প্ৰকাশ পায় তার মহিমা । জীবধর্মরক্ষার চেষ্টাতেও মানুষের নিরস্তর একটা দ্বন্দ্ব আছে । সে হচ্ছে প্ৰাণের সঙ্গে অপ্ৰাণের দ্বন্দু । অপ্ৰাণ আদিম, অপ্ৰাণ “বিরাট । তার কাছ থেকে রসদ সংগ্ৰহ করতে হয়। প্ৰাণকে, মালামসলা নিয়ে গড়ে তুলতে হয় দেহযন্ত্র । সেই অপ্ৰাণ নিষ্ঠুর মহাজনের মতো, ধার দেয়। কিন্তু কেবলই টানাটানি করে ফিরে নেবার জন্যে, প্ৰাণকে দেউলে করে দিয়ে মিলিয়ে দিতে চায় পঞ্চভূতে । এই প্ৰাণচেষ্টাতে মানুষের শুধু কেবল অপ্ৰাণের সঙ্গে প্ৰাণের দ্বন্দ্ব নয়, পরিমিতের সঙ্গে অপরিমিতের । বাচাঁবার দিকেও তার উপরি-পাওনার দাবি । বড়ো করে বঁাচতে হবে, তার অন্ন যেমন-তেমন নয় ; তার বাসন, তার বাসস্থান কেবল কাজ চলাবার জন্যে নয়- বড়োকে প্ৰকাশ