পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や88 রবীন্দ্র-রচনাবলী পুরুষং বেদ- যিনি বেদনীয় সেই পূৰ্ণ মানুষকে জানো ; অন্তরে আপনার বেদনায় র্যাকে জানা যায় তাকে সেই বেদনায় জানো, জ্ঞানে নয়, বাইরে নয় । আমাদের শাস্ত্ৰে সোহহম বলে যে তত্ত্বকে স্বীকার করা হয়েছে তা যত বড়ো অহংকারের মতো শুনতে হয় আসলে তা নয় । এতে ছোটোকে বড়ো বলা হয় নি, এতে সত্যকে ব্যাপক বলা হয়েছে । আমার যে ব্যক্তিগত আমি তাকে ব্যাপ্ত করে আছে বিশ্বাগত আমি । মাথায় জটা ধারণ করলে, গায়ে ছাই মাখলে, বা মুখে এই শব্দ উচ্চারণ করলেই সোহহম-সত্যকে প্ৰকাশ করা হল, এমন কথা যে মনে করে সেই অহংকৃত । যে আমি সকলের সেই আমিই আমারও এটা সত্য, কিন্তু এই সত্যকে আপনি করাই মানুষের সাধনা । মানুষের ইতিহাসে চিরকাল এই সাধনাই নানা রূপে নানা নামে নানা সংকল্পের মধ্য দিয়ে চলেছে । যিনি পরম আমি, যিনি সকলের আমি, সেই আমিকেই আমার বলে সকলের মধ্যে জানা যে পরিমাণে আমাদের জীবনে আমাদের সমাজে উপলব্ধ হচ্ছে সেই পরিমাণেই আমরা সত্য মানুষ হয়ে উঠছি । মানুষের রিপু, মাঝখানে এসে এই সোহহম-উপলব্ধিকে দুই ভাগ করে দেয়, একান্ত হয়ে ওঠে অহম । তাই উপনিষদ বলেন, মা গাধঃ- লোভ কোরো না । লোভ বিশ্বের মানুষকে ভুলিয়ে বৈষয়িক মানুষ করে দেয় । যে ভোগ মানুষের যোগ্য তা সকলকে নিয়ে, তা বিশ্বভৌমিক, তা মানুষের সাহিত্যে আছে, শিল্পকলায় আছে, তাই প্ৰকাশ পায় মানুষের সংসারযাত্রায় তার হৃদয়ের আতিথ্যে । তাই আমাদের শাস্ত্ৰে বলে, অতিথিদেবো ভব । কেননা ‘আমার ভোগ সকলের ভোগ” এই কথাটা অতিথিকে দিয়ে গহস্থ স্বীকার করে ; তার ঐশ্বর্যের সংকোচ দূর হয় । ব্যক্তিগত মানবের ঘরে সর্বমানবের প্রতিনিধি হয়ে আসে অতিথি, তার গহসীমাকে বিশ্বের দিকে নিয়ে যায় । না নিয়ে গেলে সেটা রাজপ্ৰসাদের পক্ষেও দীনতা । এই আতিথ্যের মধ্যে আছে সোহহংতত্ত্ব— অর্থাৎ, আমি তার সঙ্গে এক যিনি আমার চেয়ে বড়ো । আমি তার সঙ্গে মিলে আছি যিনি আমার এবং আমার অতিরিক্ত । আমাদের দেশে এমন-সকল সন্ন্যাসী আছেন যারা সোহহংতত্ত্বকে নিজের জীবনে অনুবাদ করে নেন নিরতিশয় নৈষ্কর্ম্যে ও নির্মমতায় । তারা দেহকে পীড়ন করেন জীবপ্রকৃতিকে লঙ্ঘন করবার জন্যে, মানুষের স্বাধীন দায়িত্বও ত্যাগ করেন মানবপ্রকৃতিকে অস্বীকার করবার স্পর্ধায় । তারা অহংকে বর্জন করেন যে অহং বিষয়ে আসক্ত, আত্মাকেও অমান্য করেন যে আত্মা সকল আত্মার সঙ্গে যোগে যুক্ত । তারা র্যাকে ভূমা বলেন তিনি উপনিষদে-উক্ত সেই ঈশ নন যিনি সকলকেই নিয়ে আছেন ; তাদের ভূমা সব-কিছু হতে বৰ্জিত, সুতরাং তার মধ্যে কর্মতত্ত্ব নেই । তারা মানেন না তাকে যিনি পৌরুষং নৃষু, মানুষের মধ্যে যিনি মনুষ্যত্ব, যিনি বিশ্বকর্ম মহাত্মা, র্যার কর্ম খণ্ডকৰ্ম নয়, যার কর্ম বিশ্বকর্ম ; যার স্বাভাবিকী জ্ঞানবিলক্রিয়া চ- র্যার মধ্যে জ্ঞানশক্তি ও কর্ম স্বাভাবিক, যে স্বাভাবিক জ্ঞানশক্তিকর্ম অন্তহীন দেশে কালে প্ৰকাশমান । পূর্বেই বলেছি, মানুষের অভিব্যক্তির গতি অন্তরের দিকে । এই দিকে তার সীমার আবরণ খুলে যাবার পথ । একদা মানুষ ছিল বর্বর, সে ছিল পশুর মতো, তখন ভৌতিক জীবনের সীমায় তার মন তার কর্ম ছিল বদ্ধ । জ্বলে উঠল। যখন ধীশক্তি তখন চৈতন্যের রশ্মি চলল সংকীর্ণ জীবনের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্বভৌমিকতার দিকে । ভারতীয় মধ্যযুগের কবিস্মৃতি ভাণ্ডার সুহৃদ ক্ষিতিমোহনের কাছ থেকে কবি রজবের একটি বাণী পেয়েছি । তিনি বলেছেন সব সঁাচ মিলৈ সো সঁচ হৈ না মিলৈ সো বঁঠি । खन्न व्रख्यात *ाठी कशे ख्वझे ब्रिदि ख्वश्रे द्रष्ठं । সব সত্যের সঙ্গে যা মেলে। তাই সত্য, যা মিলল না তা মিথ্যে ; রজব বলছে, এই কথাই খাটি, এতে তুমি খুশিও হাও আর রাগই কর । ভাষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, রজব বুঝেছেন, এ কথায় রাগ করবার লোকই সমাজে বিস্তর । তাদের মত ও প্রথার সঙ্গে বিশ্বাসত্যের মিল হচ্ছে না, তবু তারা তাকে সত্য নাম দিয়ে জটিলতায় জড়িয়ে