পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী “কুঞ্জবনের বনলক্ষ্মীকে দর্শনী দিই আগে, তার পরে যাব মালিনীর সন্ধানে ৷” এই বলে বুকের পকেট থেকে একখানা গল্পের বই বের করে নীরজার হাতে দিল । নীরজা খুশি হয়ে বললে, “অশ্রু-শিকল, এই বইটাই চাচ্ছিলুম। আশীৰ্বাদ করি, তোমার মালঞ্চের মালিনী চিরদিন বুকের কাছে বাধা থাক হাসির শিকলে । ওই যাকে তুমি বল তোমার কল্পনার দোসর, তোমার স্বপ্নসাঙ্গনী ! কী সোহাগ গে৷ ” রমেন হঠাৎ বললে, “আচ্ছা বউদি, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, ঠিক উত্তর দিয়ে।” “কী কথা ।” “সরলার সঙ্গে অাজ কি তোমার ঝগড়া হয়ে গেছে।” “কেন বলে তো।” “দেখলুম ঝিলের ধারে ঘাটে চুপ করে সে বসে আছে। মেয়েদের তো পুরুষদের মতো কাজ-পালানো উড়ো মন নয়। এমন বেকার দশা আমি সরলার কোনোদিন দেখি নি। জিজ্ঞাসা করলুম, ‘মন কোনদিকে P ও বললে, ‘যে দিকে তপ্ত হাওয়া শুকনো পাতা ওড়ায় সেই দিকে। আমি বললুম, ওটা হল হেঁয়ালি । স্পষ্ট ভাষায় কথা কও। সে বললে, “সব কথারই ভাষা আছে ? আবার দেখি হেঁয়ালি। তখন গানের বুলিটা মনে পড়ল কাহার বচন দিয়েছে বেদন ।” “হয়তো তোমার দাদার বচন ।” “হতেই পারে না । দাদা যে পুরুষমানুষ । সে তোমার ওই মালীগুলোকে হংকার দিতে পারে। কিন্তু ‘পুষ্পরাশবিবাগ্নিঃ এও কি সম্ভব হয়।” “আচ্ছা, বাজে কথা বকতে হবে না। একটা কাজের কথা বলি, আমার অনুরোধ রাখতেই হবে। দোহাই তোমার, সরলাকে তুমি বিয়ে করে। আইবড়ে মেয়েকে উদ্ধার করলে মহাপুণ্য ।” “পুণ্যের লোভ রাখি নে কিন্তু ওই কন্যার লোভ রাখি, এ কথা বলছি তোমার কাছে হলফ করে ।” “তা হলে বাধাটা কোথায় । ওর কি মন নেই।” “সে কথা জিজ্ঞাসাও করি নি। বলেইছি তো ও আমার কল্পনার দোসরই থাকবে, সংসারের দোসর হবে না।” হঠাৎ তীব্র আগ্রহের সঙ্গে নীরজ রমেনের হাত চেপে ধরে বললে, “কেন হবে না, হতেই হবে। মরবার আগে তোমাদের বিয়ে দেখবই, নইলে ভূত হয়ে তোমাদের জালাতন করব বলে রাখছি।” নীরজার ব্যগ্রতা দেখে রমেন বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে রইল চেয়ে ।