পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SQo রবীন্দ্র-রচনাবলী “মা, ঠাট্ট নয়। বিয়ে তো করতেই হবে, রমেনের মতো পাত্র পাবে কোথায় ।” “পাত্র অাছে এক দিকে, পাত্রীও আছে আর-এক দিকে, মাঝখানটাতে মন আছে কি না সে-খবর নেবার ফুরসৎ পাই নি। দূরের থেকে মনে হয় যেন ওইখানটাতেই খটকা ।” একটু বাজের সঙ্গে বললে নীরজ, কোনো খটকা থাকত না যদি তোমার সত্যিকার আগ্রহ থাকত।” “বিয়ে করবে অন্য পক্ষ, সত্যিকার আগ্রহটা থাকবে এক আমার, এটাতে কি কাজ চলে। তুমি চেষ্টা দেখে না।” “কিছুদিন গাছপালা থেকে ওই মেয়েটার দৃষ্টিটাকে ছুটি দাও দেখি, ঠিক জায়গায় আপনি চোখ পড়বে।” “শুভদৃষ্টির আলোতে গাছপালা পাহাড়পর্বত সমস্তই স্বচ্ছ হয়ে যায়। ও একজাতের একস্রেজ আর কি।” “মিছে বকছ । আসল কথা, তোমার ইচ্ছে নয় বিয়েটা ঘটে ।” “এতক্ষণে ধরেছ ঠিক। সরলা গেলে আমার বাগানের দশা কী হবে বলে । লাভ লোকসানের কথাটাও ভাবতে হয়। ও কী ও, হঠাৎ তোমার বেদনাটা বেড়ে উঠল নাকি ৷” উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল আদিত্য । নীরজা রুক্ষ গলায় বললে, “কিছু হয় নি। আমার জন্যে তোমাকে অত ব্যস্ত হতে হবে না।” স্বামী যখন উঠি-উঠি করছে, সে বলে উঠল, “আমাদের বিয়ের পরেই ওই অরকিড-ঘরের প্রথম পত্তন, ভুলে যাও নি তো সে কথা ? তার পরে দিনে দিনে আমরা দুজনে মিলে ওই ঘরটাকে সাজিয়ে তুলেছি। ওটাকে নষ্ট করতে দিতে তোমার মনে একটুও লাগে না !” আদিত্য বিস্মিত হয়ে বললে, “সে কেমন কথা । নষ্ট হতে দেবার শখ আমার দেখলে কোথায় ।” উত্তেজিত হয়ে নীরজা বললে, “সরলা কী জানে ফুলের বাগানের।” “বল কী। সরলা জানে না ? যে-মেসোমশায়ের ঘরে আমি মানুষ, তিনি যে সরলার জেঠামশায়। তুমি তো জান তারি বাগানে আমার হাতেখড়ি। জেঠামশায় বলতেন, ফুলের বাগানের কাজ মেয়েদেরই, আর গোরু দোওয়ানো। র্তার সব কাজে ও ছিল তার সঙ্গিনী ।” "আর তুমি ছিলে সঙ্গী।”