পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ ১৯৫ У о আদিত্য একটা পেয়ালায় ওষুধ নিয়ে ঘরে এসে প্রবেশ করলে। নীরজ বললে, “এ আবার কী।” 事 *আদিত্য বললে, “ডাক্তার বলে গেছে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ওষুধ খাওয়াতে হবে।” ওষুধ খাওয়াবার জন্তে বুঝি আর পাড়ায় লোক জুটল না! নাহয় দিনের বেলাকার জন্যে একজন নার্স রেখে দাও-না, যদি মনে এতই উদ্বেগ থাকে।” "সেবার ছলে কাছে আসবার সুযোগ যদি পাই ছাড়ব কেন ।” “তার চেয়ে কোনো সুযোগে তোমার বাগানের কাজে যদি যাও তো ঢের বেশি খুশি হব। আমি পড়ে আছি, আর দিনে দিনে বাগান যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” "হোক না নষ্ট । সেরে ওঠ আগে, তার পরে সেদিনকণর মতো দুজনে মিলে কাজ করব ।” “সরলা চলে গেছে, তুমি একলা পড়েছ, কাজে মন যাচ্ছে না। কিন্তু উপায় কী তাই বলে লোকসান করতে দিয়ে না।” “লোকসানের কথা আমি ভাবছি নে নীরু । বাগান করাটা যে আমার ব্যাবসা সে কথা এতদিন তুমিই ভুলিয়ে রেখেছিলে, কাজে তাই মুখ ছিল। এখন মন যায় না ।” “অমন করে আক্ষেপ করছ কেন । বেশ তো কাজ করছিলে এই সেদিন পর্যন্ত । কিছুদিনের জন্যে যদি বাধা পড়ে তাই নিয়ে এত ব্যাকুল হ’য়ে না।” “পাখাটা কি চালিয়ে দেব ।” “বাড়াবাড়ি কোরো না তুমি, এ-সব কাজ তোমাদের নয়। এতে আমাকে আরও ব্যস্ত করে তোলে। যদি কোনোরকম ক’রে দিন কাটাতে চাও তোমাদের তো হর্টিকালচরিস্ট ক্লাব আছে।” “তুমি যে রঙিন লিলি ভালোবাস, বাগানে অনেক খুজেছিলুম, একটাও পাই নি। এবারে ভালো বৃষ্টি হয় নি বলে গাছগুলোর তেজ নেই।” “কী তুমি মিছিমিছি বকছ । তার চেয়ে হলাকে ডেকে দাও, আমি শুয়ে শুয়েই বাগানের কাজ করব । তুমি কি বলতে চাও আমি শয্যাগত বলেই আমার বাগানও হবে শয্যাগত। শোনো আমার কথা । শুকনো সীজন ফুলের গাছগুলো উপড়িয়ে ফেলে সেখানে জমি তৈরি করিয়ে নাও । আমার সিড়ির নিচের ঘরে সরষের খোলের বস্তা আছে। হলার কাছে আছে তার চাবি ।” "তাই নাকি, হল তো এতদিন কিছুই বলে নি ।”