পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ আচারের অত্যাচার “ইংরেজিতে পাউণ্ড আছে, শিলিং আছে, পেনি আছে, ফার্দিং আছে– আমাদের টাকা আছে, আন আছে, কড়া আছে, ক্রান্তি আছে, দন্তি আছে, কাক আছে, তিল আছে।... ইংরেজ এবং অন্তাষ্ঠ জাতি ক্ষুদ্রতম অংশ ধরে না, ছাড়িয়া দেয় ; আমরা ক্ষুদ্রতম অংশ ধরি, ছাড়ি না... হিন্দু বলেন যে, ধর্মজগতেও কড়াক্রান্তিটি বাদ যায় না, স্বয়ং ভগবান কড়াক্রান্তিটিও ছাড়েন না। তাই বুঝি হিন্দু সামাজিক অনুষ্ঠানেও কড়াক্রান্তিটি পর্যন্ত ছাড়েন নাই, কড়াক্রাস্তিটির ভাবনাও ভাবিয়া গিয়াছেন, ব্যবস্থাও করিয়া গিয়াছেন।” —সাহিত্য, ৩য় ভাগ, ৭ম সংখ্যা সকল দিক সমানভাবে রক্ষা করা মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য। এইজন্য মানুষকে কোনো-না-কোনো বিষয়ে রফা করিয়া চলিতেই হয়। কেবলমাত্র যদি থিয়োরি লইয়া থাকিতে হয়, তাহা হইলে তুমি কড়া, ক্রাস্তি, দস্তি, কাক, সূক্ষ্ম, অতিস্বহ্ম এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভগ্নাংশ লইয়া, ঘরে বসিয়া, পাটিগণিতের বিচিত্র সমস্যা পূরণ করিতে পার। কিন্তু কাজে নামিলেই অতিস্থল্ম অংশগুলি ছাটিয়৷ চলিতে হয়, নতুবা হিসাব মিলাইতে মিলাইতে কাজ করিবার সময় পাওয়া যায় না। কারণ, সীমা তে এক জায়গায় টানিতেই হইবে। তুমি স্বক্ষহিসাবী, দস্তি কাক পর্যন্ত হিসাব চালাইতে চাও, তোমার চেয়ে সুস্মতর হিসাবী বলিতে পারেন, কাকে গিয়াই বা থামিব কেন । বিধাতার দৃষ্টি যখন অনস্ত স্বক্ষ, তখন আমাদের জীবনের হিসাবও অনন্ত স্থক্ষের দিকে টানিতে হইবে। নহিলে তাহার সম্পূর্ণ সন্তোষ হইবে না— তিনি ক্ষমা করিবেন না । বিশুদ্ধ তর্কের হিসাবে ইহার বিরুদ্ধে কাহারও কথা কহিবার জো নাই— কিন্তু কাজের হিসাবে দেখিতে গেলে, জোড়হন্তে বিনীতস্বরে আমরা বলি, “প্ৰভু, আমাদের অনন্ত ক্ষমতা নাই, সে তুমি জান। আমাদিগকে কাজও করিতে হয় এবং তোমার কাছে হিসাবও দিতে হয়। আমাদের জীবনের সময়ও অল্প এবং সংসারের পথও কঠিন। তুমি আমাদিগকে দেহ দিয়াছ, মন দিয়াছ, আত্মা দিয়াছ ; ক্ষুধা দিয়াছ, বুদ্ধি দিয়াছ, প্রেম দিয়াছ ; এবং এই-সমস্ত বোঝা লইয়া আমাদিগকে সংসারের সহস্ৰ লোকের সহস্ৰ বিষয়ের আবর্তের মধ্যে ফেলিয়া দিয়াছ । ইহার উপরেও