পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O& 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু এ নিয়ম খাটে না । নৃত্য-র অপভ্রংশ নাচ, পঙ্ক— পাক, অঙ্ক— আঁক, রঙ্গ— রাং, ভট্ট— ভাট, হস্ত— হাত, পঞ্চ— পাচ ইত্যাদি। । অতএব নিশ্চয়ই বিশেষণের কিছু বিশেষত্ব আছে। সে বিশেষত্ব আরও চোখে পড়ে যখন দেখা যায়, বাংলার অধিকাংশ দুই অক্ষরের বিশেষণ, যাহা সংস্কৃত মূল শব্দ অনুসারে অকারাস্ত হওয়া উচিত ছিল, তাহা আকারাস্ত হইয়াছে। যথা : সহজ—সোজা, মহৎ—মোটা, রুগ্ন—রোগ, ভগ্ন—ভাঙা, শ্বেত—শাদা, অভিষিক্ত—ভিজা, খঞ্জ—খোড়া, কাণ—কাণ, লম্ব—লম্বা, সুগন্ধ—সোধা, বক্র— বাকা, তিক্ত—তিতা, মিষ্ট—মিঠা, নগ্ন—নাগা, তির্যক্—টেড়া, কঠিন—কড়া । দ্রষ্টব্য এই যে, ‘কর্ণ’ হইতে বিশেষ্য শব্দ কান হইয়াছে, অথচ কান শব্দ হইতে বিশেষণ শব্দ কানা হইল। বিশেষ্য শবদ হইল ফাক, বিশেষণ হইল ফণক ; বঁাক শব্দ বিশেষ্য, বাকা শব্দ বিশেষণ । সংস্কৃত ভাষায় ভক্ত প্রত্যয়যোগে যে-সকল বিশেষণ পদ নিম্পন্ন হয়, বাংলায় তাহ প্রায়ই আকারান্ত বিশেষণ পদে পরিণত হয় ; ছিন্নবস্ত্র বাংলায়— ছেড়া বস্ত্র, ধুলিলিপ্ত শব্দ বাংলায়– ধুলোলেপা, কর্ণকর্তিত— কানকাট ইত্যাদি । বিশেষ্য শব্দ চন্দ্র হইতে চাদ, বন্ধ হইতে বাধ, কিন্তু বিশেষণ শবদ মন্দ হইতে হইল —মাদা। এক শবকে বিশেষরূপে বিশেষণে পরিণত করিলে ‘একা হয়। এইরূপ বাংলা দুই-অক্ষরের বিশেষণ অধিকাংশই আকারান্ত । যেগুলি অকারান্ত, হিন্দিতে সেগুলিও আকারাস্ত ; যথা, ছোট বড় ভাল । ইহার একটা কারণ আমরা এখানে আলোচনা করিতেছি । স্বর্গগত উমেশচন্দ্র বটব্যালের রচনা হইতে দীনেশবাৰু তাহার “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে নিম্নলিখিত ছত্রকয়টি উদ্ধৃত করিয়াছেন : তাম্রশাসনের ভাষার প্রতি লক্ষ করিলে দেখা যাইবে যে, ইহাতে স্বার্থে ক-এর ব্যবহার কিছু বেশি। দূত স্থানে দূতক, হট স্থানে হটকা, বাট স্থানে বাটক, লিখিত স্থানে লিখিতক, এরূপ শব্দপ্রয়োগ কেবল উদ্ধৃত অংশমধ্যেই দেখা যায়। সমুদায় শাসনে আরো অনেক দেখা যাইবে । দীনেশবাৰু লিথিয়াছেন : এই ক (যথা, বৃক্ষক চারুদত্তক পুত্রক ) প্রাকৃতে অনেকস্থলে ব্যবহৃত দেখা যায়। গাথ ভাষায় এই ক-এর প্রয়োগ সর্বাপেক্ষা অধিক ; যথা ললিতবিস্তর, একবিংশধ্যায়ে : * হবসন্তকে ঋতুবরে আগতকে রতিমো প্রিয়া ফুল্লিতপাদপকে । তবরূপ সুরূপ সুশোভনকে বসবত্তী সুলক্ষণবিচিত্রিতকে ॥১