পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o রবীন্দ্র-রচনাবলী سb(ها লাল আমাদের ইন্দ্রিয়দ্বারে যে-অtঘাত করে, তাহার যদি কোনো শবদ থাকিত, তবে তাহ অ মাদের মতে টকটক শব্দ । আবার সেই রক্তবর্ণ যখন মৃত্নতর হইয়া আঘাত করে, তখন তাহার টকটক শব্দ টুকটুক শব্দে পরিণত হয়। কিন্তু ধবধব শব্দ সম্ভবত গোড়ায় ধবল শব্দ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে এবং সংসর্গবশত নিজের অর্থসম্পত্তি হারাইয়া ধ্বনির দলে ভিড়িয়া গিয়াছে। জলজল শব্দ তাহার অন্যতর উদাহরণ ; জলন শব্দ তাহার পিতৃপুরুষ হইতে পারে, কিন্তু বর্তমান অবস্থায় সে কুলত্যাগী, সেই কারণে আমরা কোনো জিনিসকে 'জলজল হইতেছে’ বলি না— ‘জলজল করিতেছে বলি– এই করিতেছে ক্রিয়ার পূর্বে ধ্বনি শব্দ উহ। বাংলাভাষায় এইরূপ প্রয়োগই প্রসিদ্ধ। নদী কুলকুল করে, জুতা মচমচ করে, মাছি ভনভন করে, এরূপ স্থলে শব্দ করে বলা বাহুল্য ; সাদা ধবধব করে বলিলেও বুঝায়, শ্বেতপদার্থ আমাদের কল্পনাকর্ণে এক প্রকার অশবিত শব্দ করে। কোনো বর্ণ যখন তাহার উজ্জলতা পরিত্যাগ করে, তখন বলি ম্যাড়ম্যাড় করিতেছে। কেন বলি তাহার কৈফিয়ত দেওয়া আমার কর্ম নহে, কিন্তু যেখানে ম্যাড়মেড়ে বলা আবশ্বৰ – সেখানে মলিন স্নান প্রভৃতি আর-কিছু বলিয়া কুলায় না। চিকচিক গোড়ায় চিকণ শব্দ হইতে উদ্ভূত হইয়াছে কি না, সে প্রসঙ্গ এ স্থলে আমি অনাবশু্যক বোধ করি । চকচক চিকচিক ঝিকঝিক এক্ষণে বিশুদ্ধ ধ্বনিমাত্র । চিকচিকে পদার্থের চঞ্চল জ্যোতি আমাদের চক্ষে একপ্রকার অশব্দ ধ্বনি করিতে থাকে, তাহাকে আমরা চিকচিক বলি ; আবার সেই চিক্কণত৷ যদি তৈলাভিষিক্ত হয় তবে তাহা নীরবে চুকচুক শব্দ করে, আমরা বলি তেল-চুকচুকে । চিকণ পদার্থ যদি চঞ্চল হয়, যদি গতিবশত তাহার জ্যোতি একবার একদিক হইতে একবার অন্যদিক হইতে আঘাত করে, তখন সেই জ্যোতি চিকচিক ঝিকঝিক বা ঝলঝল না করিয়া চিকমিক ঝিকমিক ঝলমল করিতে থাকে, অর্থাৎ তখন সে একটা শব্দ না করিয়া দুইটা শব্দ করে। কটমট করিয়া চাহিলে সেই দৃষ্টি যেন একদিক হইতে কট এবং আর-একদিক হইতে মট করিয়া আসিয়া মারিতে থাকে, এবং ধ্বনির বৈচিত্র্য দ্বারা কাঠিন্যের ঐক্য যেন আরও পরিস্ফুট হয়। অবস্থাবিশেষে শব্দের হ্রস্বদীর্ঘতা আছে ; ধপ করিয়া যে লোক পড়ে, তাহ অপেক্ষ স্থূলকায় লোক ধপাস করিয়া পড়ে। পাতলা জিনিস কচ করিয়া কাটা যায়, কিন্তু মোট জিনিস কচাং করিয়া কাটে। আলোচ্য বিষয় আরও অনেক আছে। দেখা আবশ্বক এই ধ্বন্তাত্মক শব্দগুলির সীম কোথায়, অর্থাৎ কোন কোন বিশেষজাতীয় ছবি ও ভাব প্রকাশের জন্য ইহারা