পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ ৪২৯ প্রভৃতির সমষ্টিভূত সমাজ রক্ষার জন্ত হয় অথবা ক্ষণিক আত্মস্থথের জন্ত হয় তাহাকে কোন অর্থ অনুসারে আধ্যাত্মিক আখ্যা দেওয়া যায়। যে-উদ্দেশু জন্মমৃত্যুসংসারকে অতিক্রম করিয়া নিত্য বিরাজ করে তাহাকেই আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য কহে। কিন্তু হিন্দুমতে বিবাহ নিত্য নহে, আত্মার নিত্য আশ্রয় নহে। হিন্দুদের বানপ্রস্থকে আধ্যাত্মিক বলা যাইতে পারে। কারণ, তাহা প্রকৃত পক্ষে আত্মার মুক্তিসাধন উপলক্ষেই গ্রহণ করা হইয়া থাকে। তাহা সংসারের হিতসাধনের জন্ত নহে। যাহা হউক, আমি যতদূর আলোচনা করিয়াছি তাহাতে দেখিতেছি আমাদের বিবাহ সামাজিক বলিয়াই সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হইয়াছে। এমন-কি, এখন মনুর নিয়মও সমস্ত রক্ষিত হয় না। অতএব বর্তমান সমাজের সুবিধা ও আবখ্যক -অনুসারে হিন্দুবিবাহ সমালোচন করিবার অধিকার আছে। যদি দেখা যায় হিন্দুবিবাহে আমাদের বর্তমান সমাজে রোগ শোক দারিদ্র্য বাড়িতেছে, তবে বলা যাইতে পারে, মহু সমাজের কল্যাণ লক্ষ্য করিয়া বিবাহের নিয়ম নির্দেশ করিয়াছেন : অতএব সেই সমাজের কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি রাথিয়া বিবাহের নিয়মপরিবর্তন করা অন্যায় নহে। ইহাতে মনুর অবমাননা করা হয় না, প্রত্যুত তাহার সম্মাননা করাই হয়। কিন্তু প্রথমেই বলিয়া রাখা আবশ্যক যে, রাজবিধির সহায়তা লইয়া সমাজসংস্কার আমার মত নহে। জীবনের সকল কাজই যে লাল-পাগড়ির ভয়ে করিতে হইবে, আমাদের জন্য সর্বদাই যে একটা বড়ো দেখিয়া বিজাতীয় জুজু পুষিয়া রাখিতে হইবে, আপন মঙ্গল অমঙ্গল কোনোকালেই আপনারা বুঝিয়া স্থির করিতে পারিব না, ইহা হইতেই পারে না ; জুজুর হস্তে সমাজ সমর্পণ করিলে সমাজের আর উদ্ধার হইবে কবে । বিবাহের বয়সনির্ণয় লইয়া কিছুদিন হইতে ঘোরতর আন্দোলন উপস্থিত হইয়াছে । যদি এমন বিবেচনা করা যায় যে, সস্তানোৎপাদন বিবাহের মুখ্য উদেশ্ব এবং সুস্থ সবল সন্তান উৎপাদন সমাজের কল্যাণের প্রধান হেতু, তবে সুস্থ সন্তানোৎপাদনপক্ষে স্ত্রীপুরুষের কোন বয়স উপযোগী বিজ্ঞানের সাহায্যেই তাহ স্থির করা আবশুক । কিন্তু কিছুদিন হইতে আমাদের শিক্ষিত সমাজ এ সম্বন্ধে বিজ্ঞানের কোনো কথাই শুনিবেন না বলিয়া দৃঢ়সংকল্প হইয়াছেন। এ সম্বন্ধে তাহারা শরীরতত্ত্ববিৎ কোনো পণ্ডিতেরই মত শুনিতে চাহেন না, আপনার মত দিতেছেন । র্তাহারা বলেন, বাল্যবিবাহে সস্তান দুর্বল হয় এ কথা শ্রবণযোগ্য নহে। তাহাদের মতে আমাদের দেশের মনুষ্যেরাই যে কেবল দুর্বল তাহা নহে পশুরাও দুর্বল, অথচ পশুরা বাল্যবিবাহ সম্বন্ধে মনুর বিধান মানিয়া চলে না ; অতএব বাল্যবিবাহের দোষ দেওয়া যায় না, দেশের জলবায়ুরই দোষ । এ বিষয়ে গুটিদুয়েক বক্তব্য আছে। সত্যই যে আমাদের