পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8 OS) পারে কিন্তু সে-মিশ্রণ সত্বর বিশ্লিষ্ট হইতে আটক নাই । দম্পতির বয়সের এত ব্যবধান থাকিলে আমাদের দেশে বিধবাসংখ্যা অত্যন্ত বাড়িবে সন্দেহ নাই। যদিও বৈধব্যব্রতের মহত্ব সম্বন্ধে চন্দ্রনাথবাবুর সন্দেহ নাই, কিন্তু পুরুষ ও রমণী উভয়েরই কল্যাণ কামনায় ইহা তাহাকে স্বীকার করিতেই হইবে যে, তাই বলিয়া বিবাহিত রমণীর বৈধব্য প্রার্থনীয় নহে। শ্রদ্ধাস্পদ অক্ষয়বাবু এই মনে করিয়াই ‘হিন্দুবিবাহ প্রবন্ধে "কিশোর বালকের সহিত আপোগণ্ড বালিকার বিবাহ’ অদ্যায় বলিয়াছিলেন । বাল্যবিবাহই বৈধব্যের মূল কারণ ইহাই স্থির করিয়া তিনি বলিয়াছেন : আসুন না, সকলে মিলিয়া আমরা বালকবিবাহের কার্যত প্রতিবাদ করি। করিলে বালবৈধব্যের প্রতিরোধ করা হইবে। যাহার বিবাহ হয় নাই সে বিধবা হইয়াছে এ বিড়ম্বন আর দেখিতে হইবে না । যদি ২৪ বৎসর এবং তদৃধ্ব বয়সে পুরুষের বিবাহ স্থির হয়, তবে যিনি যেরূপ শাস্ত্রব্যাখ্যা করুন কম্ভার বয়সও বাড়াইতেই হইবে । • এইখানে চন্দ্রনাথবাবুর কথা ভালো করিয়া সমালোচনা করা যাক। কেন কন্যার বয়স অল্প হওয়া আবশ্বক তাহার কারণ দেখাইয়া চন্দ্রনাথবাবু বলেন : ইংরেজ আত্মপ্রিয় বলিয়া তাহার বিবাহের প্রকৃতপক্ষে মহৎ উদেষ্ঠ নাই। মহৎ উদেখা নাই বলিয়াই তাহার বিবাহ বিবাহই নয়। মহৎ উদেষ্ঠ থাকিলেই মানুষের সহিত প্রকৃত বিবাহ হয় । যেমন হারমোদিয়াসের সহিত এরিস্টজিটনের বিবাহ , যিশুখৃষ্টের সহিত সেন্টপলের বিবাহ ; চৈতন্তের সহিত নিত্যানন্দের বিবাহ ; রামের সহিত লক্ষ্মণের বিবাহ । এ কথা বলিবার তাৎপর্য এই যে, হিন্দুবিবাহ মহৎ উদেশ্বমূলক বলিয়া হিন্দুদম্পতির সম্পূর্ণ এক হইয়া যাওয়া আবশ্বক, নতুবা উদেশ্বসিদ্ধির ব্যাঘাত হয়। এবং এক হইতে গেলে স্ত্রীর বয়স নিতান্ত অল্প হওয়া চাই । মহৎ উদ্দেশু বলিতে এখানে স্ত্রীর পক্ষে এই বুঝাইতেছে যে, শ্বশুর শ্বশু ননন্দা দেবর প্রভৃতির সহিত মিলিয়া গৃহকার্ষের সহায়তা, অতিথির জন্ত রন্ধন ও সেবা, পরিবারে যে-সকল ধর্মানুষ্ঠান হয় তাহার আয়োজনে সহায়তা করা এবং স্বামীর সেবা করা। স্বামীর পক্ষে মহৎ উদ্দেশ্য এই যে, সাংসারিক নিত্যকার্যে স্ত্রীর সাহায্য গ্রহণ করা । সাংসারিক নিত্য-অনুষ্ঠেয় কার্যে স্ত্রীর সাহায্যগ্রহণ-করা-রূপ মহৎ উদ্দেশু সকল দেশের সকল স্বামীরই আছে, এইরূপ শুনিতে পাওয়া যায়। তবে প্রভেদ এই, সকল দেশে গার্হস্থ্য অনুষ্ঠান সমান নহে। দেশভেদে এরূপ অনুষ্ঠানের প্রভেদ হওয়া কিছুই আশ্চর্য নহে, কিন্তু উদ্দেশুভেদ দেখিতেছি না। মুসলমান সংসারে নিত্যঅনুষ্ঠান কী কী তাহা জানি না, কিন্তু ইহা জানি মুসলমান পত্নী সে-সকল অনুষ্ঠানের প্রধান সহায় । ইংরেজপরিবারে নিত্যকার্য কী তাহা জানি না, কিন্তু ইহ।