পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ԳՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী আদিম আর্য-নিবাস লেখাপড়া শিখিয়া আমাদের অনেকেই মা-সরস্বতীর কাছে আবেদন করিয়া থাকেন ; 鳴 漸 যে বিদ্যা দিয়েছ মা গো ফিরে তুমি লও, কাগজ কলমের কড়ি আমায় ফিরে দাও । মা-সরস্বতী অনেক সময়ে তাহাদের প্রার্থনানুসারে বিদ্যা ফিরাইয়া লন, কিন্তু কড়ি ফিরাইয়া দেন না । অনেক বিদ্যা, যাহা মাথা খুড়িয়া মাথায় প্রবেশ করাইতে হইয়াছিল, হঠাৎ নোটিস পাওয়া যায়, সেগুলা মিথ্যা ; আবার মাথা খুড়িয়া তাহাদিগকে বাহির করা দায় হইয়া উঠে । শতদলবাসিনী যদি ইংরেজ-আইনের বাধ্য হইতেন তবে উকিলের পরামর্শ লইয়া তাহার নিকট হইতে খেসারতের দাবি করা যাইতে পারিত। জনসমাজে লক্ষ্মীরই চাঞ্চল্য-অপবাদ প্রচার হইয়াছে, কিন্তু তাহার সপত্নীর যে নিতান্ত অটল স্বভাব এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না । \ বাল্যকালে শিক্ষা করিয়াছিলাম, মধ্য-এসিয়ার কোনো-এক-স্থানে আর্যদিগের আদিম বাসস্থান ছিল । সেখান হইতে একদল য়ুরোপে এবং একদল ভারতবর্ষে ও পারস্তে যাত্রা করে। কতকগুলি এসিয়াবাসী ও যুরোপীয় জাতির ভাষার সাদৃশু দ্বারা ইহার প্রমাণ হইয়াছে । কথাটা মনে রাখিবার একটা সুবিধা ছিল । সূর্য পূর্ব দিক হইতে পশ্চিমে যাত্রা করে। শ্বেতাঙ্গ আর্যগণও সেই পথ অনুসরণ করিয়াছেন, এবং পূর্বাচলের কাছেও দুই একটি মলিন জ্যোতিরেখা রাখিয়া গিয়াছেন । কিন্তু উপমা যতই সুন্দর হউক, তাহাকে যুক্তি বলিয়া গ্রহণ করা যায় না। আজকাল ইংলণ্ড ফ্রান্স ও জর্মানিতে বিস্তর পুরাতত্ত্ববিৎ উঠিয়াছেন, তাহারা বলেন, যুরোপই আর্যদের আদিম বাসস্থান, কেবল একদল কোনো বিশেষ কারণে এসিয়ায় আসিয়া পড়িয়াছিল । ইহাদের দল প্রতিদিন যেরূপ পুষ্টিলাভ করিতেছে তাহাতে বেশ মনে হইতেছে, আমাদের পুত্রপৌত্রগণ প্রাচীন আর্যদের সম্বন্ধে স্বতন্ত্র পাঠ মুখস্থ করিতে আরম্ভ করিবেন এবং আমাদের ধারণাকে একটা বহুকেলে ভ্রম বলিয়া অবজ্ঞা করিতে ছাড়িবেন না।