পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8 Ꮔ☾ এককালে আর্যজাতির অন্তভূক্ত ছিল ; সর্বাগ্রে তাহারাই বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল, এইজন্ত তাহাদের সহিত অবশিষ্ট আর্যগণের সাদৃশু ক্রমশই ক্ষীণতর হইয়া আসিয়াছে। আর্যদিগের সহিত সেমেটিকদের সম্পর্ক স্থির হইয়া গেলে আদিমকালে উভয়ের একত্র এসিয়া-বাসই অপেক্ষাকৃত সংগত বলিয়া মনে হইতে পারে। কিন্তু এ মত এখনও পরিস্ফুট হয় নাই, অকুমানের মধ্যেই আছে । আমরা বলি, আদিম বাসস্থান যেখানেই থাক্, কুটুম্বিতা যতই বাড়ে ততই ভালো। এই এক আর্যসম্পর্কে পৃথিবীর অনেক বড়ে বড়ো জাতির সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ বাধিয়াছে। আরবিক ও য়িহুদিরা কম লোক নহে। তাহারা যদি জাতভাই হইয়া দাড়ায় সে তো মুখের বিষয় । বর্ণিত আছে যে, দ্রৌপদী কর্ণকে দেখিয়া মনে করিতেন— যখন আমার সে-ই পঞ্চস্বামীই হইল, তখন কর্ণকে স্বদ্ধ ধরিয়া ছয় স্বামী হইলেই মনের খেদ মিটিত ; তাহা হইলে পৃথিবীতে আমার স্বামীর তুলনা মিলিত না। আমাদেরও কতকটা সেই অবস্থা। ইংরেজ ফরাসী গ্ৰীক লাটিন ইহারা তো আমাদের খুড়তুতো ভাই, এখন ইহুদি মুসলমানেরাও যদি আমাদের আপনার হইয়া যায় তাহা হইলে পৃথিবীতে আমাদের আত্মীয়গৌরবের তুলনা মিলে না। তাহা হইলে আমাদের আর্যমাতার প্রথম-জাত এই অজ্ঞাত পুত্র কর্ণও আমাদের চিরবৈরীশ্রেণী হইতে কুটুম্বশ্রেণীতে ভূক্ত হন । > & >> আদিম সম্বল ষে জাতি নূতন জীবন আরম্ভ করিতেছে তাহার বিশ্বাসের বল থাকা চাই। বিশ্বাস বলিতে কতকগুলা অমূলক বিশ্বাস কিংবা গোড়ামির কথা বলি না। কিন্তু কতকগুলি ধ্রুব সত্য আছে, যাহা সকল জাতিরই জীবনের মূলধন, যাহা চিরদিনের পৈতৃক সম্পত্তি; এবং যাহা অনেক জাতি সাবালক হইয়া উড়াইয়া দেয় অথবা কোনো কাজে না খাটাইয়া মাটির নীচে পুতিয়া যক্ষের জিন্মায় সমর্পণ করে। যেমন একটা আছে স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাস ; অর্থাৎ আর-একটুনকেহ ঘাড় ধরিয়া আমার কোনো স্থায়ী উপকার করিতে পারে এ কথা কিছুতে মনে লয় না, আমার চোখে ঠুলি দিয়া আর-একজন যে আমাকে মহত্বের পথে লইয়া যাইতে পারে এ কথা স্বভাবতই অসংগত এবং অসহ্য মনে হয় ; কারণ, যাহাতে মনুষ্যত্বের অপমান হয় তাহা