পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী واسرا8 পারি নাই। প্রাতঃকালে আহার করিবার সময় তিনি রুটিখও গাছের শাখায় এবং ভূতলে রাখিয়া দিতেন, পাখিরা আসিয়া খাইলে পরে তবে তাহার আহার সম্পন্ন হইত। * তাহার একটি সাধ ছিল আমাদের দেশীয় শিক্ষিত যুবকদের জন্ত ভালো লাইব্রেরি এবং আলোচনাসভ স্থাপন করা। এই উদেশ্বসাধনের জন্ত রৌদ্রবৃষ্টি অর্থব্যয় এবং শারীরিক কষ্ট তুচ্ছ করিয়া তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া ফিরিয়াছেন। যাহারা তাহার সহায়তাসাধনে প্রতিশ্রুত ছিলেন র্তাহাদের উৎসাহ অনবরত প্রজ্জলিত রাথিয়াছেন। অবশেষে আয়োজন সম্পূর্ণ হইতে না হইতেই তিনি সাংঘাতিক পীড়ায় আক্রান্ত হইলেন । শুনা যায় এই লাইব্রেরি-স্থাপন চেষ্টার জন্ত গুরুতর অনিয়ম ও পরিশ্রমই তাহার পীড়ার অন্যতম কারণ। মৃত্যুর পূর্বদিনে তিনি আমাদের দেশীয় কোনো সম্রাস্ত মহিলাকে বলিয়াছিলেন, দেশে আমার যে কোনো আত্মীয়স্বজন নাই তাহা নহে, খৃষ্টিয়ান ধর্মবিশ্বাস ত্যাগ করিয়া একেশ্বরবাদ গ্রহণ করাতেই আমি তাহাদের পর হইয়াছি। মৃত্যুকাল পর্যন্ত র্তাহার লাইব্রেরির কথা ভুলিতে পারেন নাই। র্তাহার কোনো-একটি ছাত্রের নিকট হইতে তিনি অগ্রিম বেতন লইয়াছিলেন, সেই টাকা তাহাকে ফেরত দিবার জন্ত মৃত্যুশয্যায় তাহার বিদেশীয় নাম স্মরণ করিবার অনেক চেষ্টা করিয়া অকৃতকার্য হইয়াছিলেন, সেই তাহার শেষ চেষ্টা ; এবং সেই ছাত্রকে সন্ধান করিয়া তাহার প্রাপ্য টাকা তাহাকে ফিরাইয়া দিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন, সেই তাহার শেষ অনুরোধ । তিনি যদি এখানে আসিয়া তাহার স্বজাতীয়দের আতিথ্য লাভ করিতেন তবে আর কিছু না হউক হয়তো তাহার জীবনরক্ষা হইত, কারণ ভারতবর্ষে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য যুরোপীয়ের পক্ষে কী কী নিয়ম পালন করা কর্তব্য সে-অভিজ্ঞতা তিনি স্বজাতীয়ের নিকট হইতে লাভ করিতে পারিতেন । যদি-বা জীবনরক্ষা ন হইত তথাপি অন্তত যেরূপ চিকিৎসা যেরূপ আরামযেরূপ সেবাশুশ্রুষা তাহাদের চিরাভ্যস্ত, বিদেশে মৃত্যুকালে সেটুকু হইতে র্তাহাকে বঞ্চিত হইতে হইত না ; এবং যুরোপীয় ডাক্তারের দ্বারা চিকিৎসিত হইবার জন্য অন্তিমকাল পর্যন্ত র্তাহার যে-আকাজক্ষণ অপরিতৃপ্ত ছিল তাহাও পূর্ণ হইতে পারিত। সুইডেনবাসী হ্যামারগ্রেন সাহেবের বাংলায় আতিথ্যযাপনের সংক্ষেপ বিবরণ আমরা প্রকাশ করিলাম । তিনি এ দেশে অল্পকাল ছিলেন, এবং যদিও আমাদের প্রতি র্তাহার আন্তরিক প্রেম ও আমাদের হিতসাধনে তাহার একান্ত চেষ্টা ছিল