পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ , 8b-8 এবং যদিও তাহার অকৃত্ৰিম অমায়িক স্বভাবে তিনি ছাত্রবৃন্দ ও বন্ধুবর্গের হৃদয় আকর্ষণ করিতে পারিয়াছিলেন, তথাপি এমন-কিছু করিয়া যাইতে পারেন নাই যাহাতে সাধারণের নিকট সুপরিচিত হইতে পারেন, স্বতরাং এই বিদেশীর বৃত্তান্ত সাধারণের আলোচ্য বিষয় না হইবার কথা। আমরাও সে প্রসঙ্গে বিরত থাকিতাম, কিন্তু আমাদের কোনো কোনো বাংলাসংবাদপত্র তাহার অস্ত্যেষ্টিসৎকার সম্বন্ধে যেরূপ নিষ্ঠুর আলোচনা উত্থাপন করিয়াছেন তাহাতে ক্ষোভ প্রকাশ না করিয়া থাকা যায় না। হ্যামারগ্রেন মৃত্যুর পূর্বে ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, তাহার মৃতদেহ কবরস্থ না করিয়া যেন দাহ করা হয়। র্তাহার সেই অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে নিমতলার ঘাটে র্তাহার মৃতদেহ দাহ হইয়াছিল । শাস্ত্রমতে অগ্নি যদিও পাবক এবং কাহাকেও ঘূণা করেন না, তথাপি হিন্দুর পবিত্র নিমতলায় স্লেচ্ছদেহ দগ্ধ হয় ইহাতে কোনো কোনো হিন্দুপত্রিকা গাত্রদাহ প্রকাশ করিতেছেন। বলিতেছেন এ পর্যন্ত মৃত্যুর পরে তাহারা ‘হাড়িডোম প্রভৃতি অনার্য অস্ত্যজ জাতির সহিত একস্থানে ভস্মীভূত হইতে আপত্তি করেন নাই, কিন্তু যে-শ্মশানে কোনো সুইডেনবাসীর চিতা জলিয়াছে সেখানে যে র্তাহাদের পবিত্র মৃতদেহ পুড়িবে, ইহাতে র্তাহারা ধৈর্য রক্ষা করিতে পারিতেছেন नी । কিছুকাল পূর্বে একসময় ছিল যখন আমাদের স্বদেশপ্রেমিকগণ প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিতেন যে, হিন্দুধর্মে উদারতা বিশ্বপ্রেম নির্বিচার-আতিথ্য অন্ত সকল ধর্ম অপেক্ষা অধিক। কিন্তু জানি না কী দুদৈবক্রমে সম্প্রতি এমন দুঃসময় পড়িয়াছে যে, আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকেরাও হিন্দুধর্মকে নিষ্ঠুর সংকীর্ণ এবং একান্ত পরবিদ্বেষী বলিয়া স্বীকার করিতে কুষ্ঠিত হইতেছেন না । শ্রুতিতে অাছে, অতিথিদেবোভব । কিন্তু কালক্রমে আমাদের লোকাচার এমন অনুদার ও বিকৃত হইয়া আসিয়াছে যে, কোনো বিদেশীয় বিজাতীয় সাধুব্যক্তি যদি আমাদের দেশে উপস্থিত হইয়া প্রতিপূর্বক আমাদের মধ্যে অবস্থান করিতে ইচ্ছা করেন, তবে কোনো হিন্দুগৃহ তাহাকে সমাদরের সহিত অসংকোচে স্থান দেয় না, র্তাহাকে স্বারস্থ কুকুরের স্থায় মনে মনে দূরস্থ করিতে ইচ্ছা করে ; এই অমাহুষিক মানবন্ধুণাই কি আমাদের পক্ষে অক্ষয় কলঙ্কের কারণ নহে, অবশেষে আমাদের শ্মশানকেও কি আমাদের গৃহের দ্যায় বিদেশীর নিকটে অবরুদ্ধ করিয়া রাখিব। জীবিত কালে আমাদের গৃহে পরদেশীর স্থান নাই, মৃত্যুর পরে আমাদের শ্মশানেও কি পরদেশীর দগ্ধ হইবার অধিকার থাকিবে না । যদি আমাদের ধর্মশাস্ত্রে ইহার বিরুদ্ধে কোনো নিষেধ থাকিত তাহা হইলেও