পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぬb" রবীন্দ্র-রচনাবলী বিলাতের যাহা-কিছু সম্পূর্ণ আমাদের করিয়া লইতে পারি, অর্থাৎ যাহাতে করিয়া আমাদের মধ্যে অন্যায় আত্মবিরোধ না ঘটে, চারিদিকের সহিত সামঞ্জস্য নষ্ট না হয়, যাহা আমাদের সহিত মিশ্রিত হইয়া আমাদিগকে পোষণ করিতে পারে, ভারাক্রান্ত বা ব্যাধিগ্রস্ত না করে, তাহাতেই আমাদের বলবৃদ্ধি এবং তাহার বিপরীতে আমাদের আয়ুক্ষয়মাত্র । সাহেবিয়ানা আমাদের পক্ষে বোঝা । তাহার কাঠখড় অধিকাংশ বিলাত হইতে আনাতেই হয়, তাহার খরচ অতিরিক্ত । তাহা আমাদের সর্বসাধারণের পক্ষে নিতান্ত দুঃসাধ্য। তাহাতে আমাদের নিজের আদর্শ, নিজের আশ্রয় নষ্ট করে, অথচ তৎপরিবর্তে যে-আদর্শ যে-আশ্রয় দেয়, তাহা আমরা সম্পূর্ণভাবে বিশুদ্ধভাবে রক্ষা করিতে পারি না। তাঁর ছাড়িয়া যে-নৌকায় পা দিই, সে-নৌকার হাল অন্যত্র । মাঝে হইতে স্বেচ্ছাচার-অনাচার প্রবল হইয়া উঠে । সেইজন্য প্রতিদিন দেখিতেছি, আমাদের দেশী সাহেবিয়ানার মধ্যে কোনো ধ্রুব অাদর্শ নাই ; ভালোমন্দ শিষ্ট-অশিষ্টর স্থলে সুবিধা-অসুবিধা ইচ্ছা-অনিচ্ছা দখল কধিয়া বসিয়াছে। কেহ-বা নিজের সুবিধামতে একরূপ আচরণ করে, কেহ-বা অন্তরূপ ; কেহ-বা যেটাকে বিলাতি হিসাবে কর্তব্য বলিয়া জানে, দেশী সমাজের উত্তেজনার অভাবে আলস্তবশত তাহা পালন করে না ; কেহ-বা যেটা সকল সমাজের মতেই গৰ্হিত বলিয়া জানে, স্বাধীন আচারের দোহাই দিয়া স্পর্ধার সহিত তাহা চালাইয়া দেয়। এক দিকে অবিকল অনুকরণ, এক দিকে উচ্ছ স্থল স্বাধীনতা । এক দিকে মানসিক দাসত্ব, অন্ত দিকে স্পর্ধিত ঔদ্ধত্য। সর্বপ্রকার আদর্শচ্যুতিই ইহার কারণ। এই আদর্শচ্যুতি এখনও যদি তেমন কুদৃপ্ত হইয়া না উঠে, কালক্রমে তাহ উত্তরোত্তর কদর্য হইতে থাকিবে, সন্দেহ নাই । যাহারা ইংরেজের টাটকা সংস্রব হইতে নকল করিতেছেন, র্তাহাদের মধ্যেও যদি ইংরেজি সামাজিক শিষ্টতার বিশুদ্ধ আদর্শ রক্ষিত না হয়, তবে তাহাদের উত্তরবংশীয়দের মধ্যে বিকার কিরূপ বিষম হইয়া উঠিবে, তাহা কল্পনা করিতেও লজ্জাবোধ হয় । । ব্যাজটু বলেন, অমুকরণের প্রভাবে জাতি গঠিত হইতে থাকে, কিন্তু তাহা সংগত অনুকরণে– জাতীয় প্রকৃতির অমুকুল অমুকরণে । ষে-জাতি অসংগত অনুকরণ করে— ধ্রুবাণি তস্ত নগুস্তি অধ্ৰুবং নষ্টমেব চ। >S)ob"