পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(: o a রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাদের লাভ। স্মরণ যদি না করি, তবে তো তাহাকে হারাইব । যত দীর্ঘকাল আমরা মহাত্মাদিগকে পূজা করিব, ততই তাহাদের স্মৃতি আমাদের দেশের স্থায়ী ঐশ্বর্যরূপে বর্ধিত হইতে থাকিবে । বড়োলোককে স্মরণীয় করিবার একটা দেশী উপায় আমাদের এখানে প্রচলিত আছে, শিক্ষিতলোকে সে দিকে বড়ো-একটা দৃষ্টিপাত করেন না। আমাদের দেশে জয়দেবের মূর্তি নাই, কিন্তু জয়দেবের মেলা আছে। যদি মূর্তি থাকিত, তবে এতদিনে কোন জঙ্গলের মধ্যে অথবা কোন কালাপাহাড়ের হাতে তাহার কী গতি হইত বলা যায় না। বড়োজোর ভগ্নাবস্থায় মুজিয়মে নীরবে দাড়াইয়া পণ্ডিতে পণ্ডিতে ভয়ংকর বিবাদ বাধাইয়া দিত। মূর্তি মাঠের মধ্যে বা পথের প্রান্তে খাড়া হইয়া থাকে, পথিকের কৌতুহল-উদ্রেক যদি হয় তো সে ক্ষণকাল চাহিয়া দেখে, না হয় তো চলিয়া যায়। কলিকাতা শহরে যে মূর্তিগুলো রহিয়াছে, শহরের অধিকাংশ লোকই তাহার ইতিহাসও জানে না, তাহার দিকে চাহিয়াও দেখে না। *疇 একবার সভা ডাকিয়া চাদ সংগ্ৰহ করিয়া বিলাতের শিল্পীকে দিয়া অনুরূপ হউক বা বিরূপ হউক একটা মূর্তি কোনো জায়গায় দাড় করাইয়া দেওয়া গেল, তার পরে মুনিসিপ্যালিটির জিন্মায় সেটা রহিল ; ইহা মৃত মহাত্মাকে অত্যন্ত সংক্ষেপে ‘থ্যাঙ্কস দিয়া বিদায় দেওয়ার মতো কায়দা । র্তাহার নামে একটা লাইব্রেরি বা একটা বিদ্যালয় গড়িয়া তুলিলেও কিছুদিন পরে নানা কারণে তাহা নষ্ট বা বিকৃত হইয়া যাইতে পারে । । কিন্তু মেলায় যে-স্থতি প্রচারিত হয়, তাহা চিরদিন নবীন, চিরদিন সজীব, এক কাল হইতে অন্ত কাল পর্যন্ত ধনী-দরিদ্রে পণ্ডিতে-মুখে মিলিয়া তাহাকে বহন করিয়া লইয়া যায়। তাহাকে কেহ ভাঙিতে পারে না, ভুলিতে পারে না। তাহার জন্ত কাহাকেও চাদার খাতা লইয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে হয় না, সে আপনাকে আপনি অতি সহজে রক্ষা করে । দেশের শিক্ষিতসমাজ এই কথাটা একটু ভাবিয়া দেখিবেন কি। রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, দেবেন্দ্রনাথের স্মৃতিকে বিদেশী উপায়ে থর্ব না করিয়া, ব্যর্থ না করিয়া, কেবল নগরের কয়েকজন শিক্ষিত লোকের মধ্যে বদ্ধ না করিয়া দেশপ্রচলিত সহজ উপায়ে সর্বকালে এবং সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপ্ত করিবার চেষ্টা করিবেন কি । SW2X R