পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ রবীন্দ্র-রচনাবলী কর্তারা মনে করিতেছেন, চাষার যদি আর-একটু ভালো করিয়া চাষ করিতে শেখে এবং স্বাস্থ্য বঁাচাইয়াচলিবার উপদেশ পায়, যদি সাধারণ হিসাবপত্রটা লিখিয়া জমিদার ও মহাজনের অন্তায় প্রবঞ্চনার হাত এড়াইতে পারে, তবে তাহাতে দেশের যতটুকু ঐরক্ষণ হইবে, তাহাতে প্রজার লাভ এবং রাজারও লাভ। অতএব গোড়ায় তাহাদের শিক্ষার ব্যবস্থা চাই । * কিন্তু শিক্ষা-জিনিসটাকে একদিকে একবার শুরু করিয়া দিলে তার পরে তাহাকে গণ্ডি টানিয়া কমানো শক্ত । বিদেশী রাজার পক্ষে সেটা একটা বিষম ভাবনা । প্রজা বাচিয়া-বতিয়া থাকে, এটা তাহার একান্ত প্রয়োজন, কিন্তু বঁাচার চেয়েও যদি বেশি অগ্রসর হইয়া পড়ে, তবে সেটা তাহার প্রয়োজনের সঙ্গে ঠিক খাপ খায় না। এইজন্ত প্রাইমারি শিক্ষার প্রস্তাবে কর্তৃপক্ষের নানা রকম দুশ্চিন্তার লক্ষণ দেখা যাইতেছে। র্তাহারা ভাবিতেছেন খাল কাটিয়া বেনে জল ঢোকানো কাজটা ভালো নয়—শিক্ষার স্বযোগে আমাদের দেশের ভদ্রলোকের ঢেউটা যদি চাষার মধ্যে প্রবেশ করে, তবে সে একটা বিষম ঝঙ্কাটের স্থষ্টি করা হইবে । • # অতএব চাষাদের শিক্ষাকে এমন শিক্ষা করা চাই, যাহাতে মোটের উপর তাহারা চাষাই থাকিয়া যায়। তাহারা যেন কেবল গ্রামের ম্যাপটাই বোঝে ; পৃথিবীর ম্যাপ চুলায় যাক, ভারতবর্ষের ম্যাপটাও তাহাদের বুঝিবার প্রয়োজন নাই। তা ছাড়া তাহাদের ভাষা শিক্ষাটা প্রাদেশিক উপভাষার বেড়া ডিঙাইয়_না যায়, সেটাও দেখা দরকার । Q অতএব প্রথমেই দেখিতেছি, আমরা চাষাদের শিক্ষালাভ হইতে দেশের যেসুবিধাটা আশা করিতেছি, কর্তৃপক্ষ স্বভাবতই সেটাকে আনন্দের বিষয় বলিয়া মনে করিতে পারেন না । আমাদের দেশহিতৈষীরা যদি মনে করেন, সরকারের কর্তব্য দেশের সাধারণ লোকদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আমাদের কর্তব্য তৎসম্বন্ধে রেজোলুশন পাস করা, তবে এ কথাটা আমাদিগকে মনে রাখিতেই হইবে যে, সরকারের হাতে শিক্ষার ভার দিলে সে-শিক্ষার দ্বারা তাহারা তাহাদের উদ্দেশু সাধনেরই চেষ্টা করিবেন, আমাদের উদ্দেশু দেখিবেন না। র্তাহারা চাষাকে গ্রামের চাষা রাখিবার জন্তই ব্যবস্থা করিবেন, তাহাকে ভারতবর্ষের অধিবাসী করিয়া তুলিবার জন্ত ব্যস্ত হইবেন না। শিক্ষা যদি নিজের হাতে লই, তবেই নিজের মতলবমতো শিক্ষা দিতে পারিব— ভিক্ষাও করিব, ফরমায়েশও দিব, এ কখনও হয় না। ইংরেজিতে একটি চলতি কথা আছে, দানের ঘোড়ার দাত পরীক্ষা করিয়া লওয়াটা শোভা পায় না।