পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা ৫২৩ অন্যত্র ইহা তো দেখিয়াছি দয়ানন্দের দল আপন সম্প্রদায়ের জন্ত স্বচেষ্টায় বিদ্যালয় স্থাপন করিতেছে। আমাদের দেশেও এইরূপ চেষ্টা কী করিলে সাধ্য হইতে পারে এবং এই-সকল নিম্নতন বিদ্যালয়গুলিতে কী কী বিষয় কী নিয়মে শিক্ষা দিতে হইবে, স্বধীগণ ভাণ্ডার’ পত্রে তাহার আলোচনা করিলে সম্পাদক কৃতাৰ্থ হইবেন । 〉S)〉ミ শিক্ষার আন্দোলনের ভূমিকা সমাজকে বিদ্যা শিখাইবার জন্ত আমাদের দেশ কোনোদিন স্বদেশী বা বিদেশী রাজার আইনের বাধনে ধরা দেয় নাই । নিজের শিক্ষার ব্যবস্থা সমাজের লোক নিজেরাই করিয়াছে। সেই শিক্ষার ব্যবস্থা বলিতে যে কেবল টোল এবং পাঠশালাই বুঝাইত তাহা নহে, পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এই ভারতবর্ষেই স্থাপিত হইয়াছিল। প্রাচীন ভারতে নালন্দা এবং তক্ষশিলায় যে-বিদ্যায়তন ছিল, তেমন বৃহৎ ব্যাপার এখনও কোথাও আছে কি না সন্দেহ । মিথিলা কাশী নবদ্বীপে ভারতের প্রাচীন বিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় রাজসাহায্য ব্যতিরেকেই চিরদিন চলিয়াছে। বর্তমানকালে নানা কারণে শিক্ষালাভের জন্ত অামাদিগকে বহুল পরিমাণে রাজার অধীনতা স্বীকার করিতে হইয়াছে । ইহাতে আমাদের যথোচিত শিক্ষালাভের কী পরিমাণ ব্যাঘাত ঘটিতেছে, তাহা আলোচনা করিবার প্রয়োজন নাই ; কিন্তু সমাজ আত্মহিতসাধনের শক্তি হইতে যে প্রত্যহ ভ্ৰষ্ট হইতেছে, ইহাই আমি সর্বাপেক্ষ আক্ষেপের বিষয় বলিয়া জ্ঞান করি। আমাদের যে-পাঠশালা যে-টোল অনায়াসে . স্বদেশের মাটি হইতে রস আকর্ষণ করিয়া দেশকে চিরদিন ফলদান করিয়া আসিয়াছে, সেই আমাদের স্বকীয় পাঠশালা ও টোলগুলিও ক্রমশই রাজার গলগ্ৰহ হইয়া উঠিয়া আত্মপোষণের স্বাধীন শক্তি হারাইতেছে । মোগলসাম্রাজ্যসূর্য যখন অস্তমিত হইল, তখন সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিদ্যার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয় নাই। স্বভাবের নিয়মে একদিন ইংরেজকেও নিশ্চয় এ দেশ হইতে বিদায় হইতে হইবে, তখন র্তাহাদের অন্নজীবী টোল-পাঠশালাগুলি ভিক্ষান্নের জন্ত আবার কাহার দ্বারে হাত পাতিতে যাইবে । শক্তিলাভই সকল লাভের শ্রেষ্ঠ ; কারণ, তাহা কেবলমাত্র খাদ্যলাভ নহে, তাহাই মনুষ্যত্বলাভ । নিজের হিতসাধনের শক্তি যখন অভ্যাসের অভাবে, সুযোগের অভাবে, সামর্থ্যের অভাবে সমাজ হারাইতে বসে তখন সে-ক্ষতি কোনো প্রকার বাহ সমুদ্ধির